রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ১০:২১

পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও রাশিয়ার হামলা অব্যাহত: জেলেনস্কি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২০, ২০২৫ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও রাশিয়ার হামলা অব্যাহত: জেলেনস্কি

পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও রাশিয়ার হামলা অব্যাহত: জেলেনস্কি

খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই যুদ্ধবিরতি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, পুতিনের এই ঘোষণা সত্ত্বেও রাশিয়া তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত শুক্রবার ইস্টার উৎসব উপলক্ষে ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার জন্য সকল সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “মানবিক বিবেচনায় রাশিয়া এই ইস্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করছে।” পুতিন রাশিয়ার সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে নির্দেশ দেন, এই সময়ে সব ধরনের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে, তবে যেকোনো উসকানি বা হামলার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে।

এই ঘোষণাকে প্রাথমিকভাবে মানবিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।

জেলেনস্কির অভিযোগ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়া তাদের যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে এবং হামলা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, “রাশিয়া যদি সত্যিই নিঃশর্ত ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির পথে এগোতে চায়, তাহলে ইউক্রেনও সেই পথে হাঁটবে। আমাদের পদক্ষেপ রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের সমানুপাতিক হবে।”

জেলেনস্কি আরও উল্লেখ করেন, ইউক্রেন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল। তিনি রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে অপ্রতুল এবং অবিশ্বাসযোগ্য বলে মন্তব্য করেন।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “পুতিন এখন ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির কথা বলছেন, অথচ আমরা ৩০ দিনের পূর্ণ বিরতি চেয়েছিলাম। তাঁর কথায় আর ভরসা করা যায় না। আমরা তাঁর কাজের ওপর নির্ভর করি।” তিনি জানান, রাশিয়ার কুরস্ক ও বেলগোরোদ অঞ্চলে লড়াই চলছে এবং রাশিয়ান ড্রোন এখনো আকাশে সক্রিয় রয়েছে। তবে, কিছু এলাকা তুলনামূলকভাবে শান্ত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “পুতিন যদি শান্তির ব্যাপারে সত্যিই আন্তরিক হন, তাহলে তাঁর এখনই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমস্ত আগ্রাসন বন্ধ করা উচিত। শুধু এক দিনের ইস্টার বিরতি যথেষ্ট নয়।”

যুক্তরাষ্ট্রও আগে একটি ৩০ দিনের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, দ্রুত অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র আর এই যুদ্ধে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করবে না। এই প্রেক্ষাপটে পুতিনের ইস্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং এর লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সেনাসদস্য। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, এবং বিশ্ব অর্থনীতি ও জ্বালানি সরবরাহে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

এর আগে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অর্থোডক্স বড়দিন উপলক্ষে রাশিয়া একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। তবে, উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার অভাবে তা কার্যকর হয়নি। বর্তমান ইস্টার যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রেও রাশিয়ার অঙ্গীকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এই সংঘাতের সমাধানকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং এর লঙ্ঘনের অভিযোগ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এবং তাদের কার্যক্রমে শান্তির কোনো ইচ্ছা প্রতিফলিত হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই যুদ্ধের সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পক্ষে। তবে, রাশিয়ার অব্যাহত আগ্রাসন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান হতাশা এই প্রক্রিয়াকে জটিল করছে। ইউক্রেন এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামরিক ও আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যুদ্ধবিরতির এই সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যে রাশিয়ার প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করার আগে তাদের কার্যক্রম যাচাই করা জরুরি।

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি