জাপান সফর সফল: বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক জাপান সফরকে ‘খুবই সফল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হয়েছে এবং তা নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে। রোববার বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম জানান, সফরের সময় বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা বিষয়ে উন্নয়ন নীতি ঋণ বাবদ ৪১৮ মিলিয়ন ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল-গেজ ডাবল রেলপথ উন্নয়নে ৬৪১ মিলিয়ন ডলার এবং বৃত্তি খাতে ৪.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে এবং যেসব আশ্বাস বাংলাদেশ চেয়েছিল, তার সবই পাওয়া গেছে। তিনি জানান, জাপান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেছে এবং মহেশখালী ও মাতারবাড়ি উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সফরের অন্যতম লক্ষ্য ছিল জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবার উল্লেখ করেছেন যে তিনি বাংলাদেশকে একটি উৎপাদনশীল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান, এবং এ লক্ষ্যে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে জাপান ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি অনুসরণ করছে, যার ফলে তারা চীনের বাইরেও বিনিয়োগে আগ্রহী। সফরের সময় ড. ইউনূস জাপানের প্রধান বিনিয়োগ সংস্থা এবং বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার কথাও জানান তিনি। তাঁর ভাষায়, চীন সফরের পর যেমন চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসেছে, তেমনি এবার জাপানের শীর্ষ বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে আসবে এবং তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে।
জাপানে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়েও নতুন অগ্রগতি হয়েছে। প্রেস সচিব জানান, জাপানি কোম্পানিগুলো আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নিতে চায়। এরই মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা এই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে। বর্তমানে জাপানে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছে, এবং এই সরকারের সময় রেকর্ড ৩ হাজার শিক্ষার্থী সেখানে গিয়েছে। সামনে আরও বেশি মানুষ পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাপান ভাষার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিচ্ছে এবং আরও আলোচনা চলবে। যত দ্রুত সম্ভব ও যত বেশি জনশক্তি পাঠানো যায়, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন প্রধান উপদেষ্টা।
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করছে। কীভাবে তারা বড় পরিসরে জনশক্তি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত এ উদ্যোগ স্কেল আপ করতে হবে এবং টাস্কফোর্স এ বিষয়ে কাজ করছে। জাপানে থাকা বাংলাদেশিরাও এই উদ্যোগে সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গুম সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, গুম কমিশনের সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন এবং ইতোমধ্যে দুটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় একটি রিপোর্টও শিগগির আসবে। তিনি বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জাতি জানতে চায়। কমিশনের ফাইন্ডিংস জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এছাড়া, ডিসেম্বরে একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়—এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি দলের ডিসেম্বরের নির্বাচন চাওয়ার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।