গাজা ‘পৃথিবীর দোযখে’ পরিণত হয়েছে – রেডক্রস
আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেডক্রস জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ যে তা যেন ‘পৃথিবীর দোযখে’ পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি আরও সতর্ক করে বলেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হবে, কারণ তাদের রসদ ফুরিয়ে যাচ্ছে।
রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা এখন এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি, যাকে আমি পৃথিবীর দোযখ বলতে বাধ্য। গাজার মানুষ বিদ্যুৎ, পানি, খাবার—এমনকি বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ থেকেও বঞ্চিত।” তিনি গাজার মানবিক সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানান।
গত ২ মার্চ ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। এই সময় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের শঙ্কায় পড়ে। ওই দিন থেকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করে। এর কয়েক দিন পর ১৮ মার্চ রাতে গাজায় তীব্র বিমান হামলা চালায় তারা। এই হামলায় এক রাতেই ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। এই ঘটনা গাজার পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। তারা অভিযোগ করেন, এই ত্রাণ ব্যবহার করে হামাস নাকি নিজেদের পুনর্গঠিত করেছে। তবে রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক এই দাবি খণ্ডন করে বলেন, “গত ছয় সপ্তাহে গাজায় কোনো ত্রাণ ঢোকেনি। আমাদের হাসপাতালগুলো চালু রাখার জন্য যে রসদ আছে, তা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।”
গাজার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট চলছে। আহত মানুষেরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিশু ও বৃদ্ধরা এই সংকটের সবচেয়ে বড় শিকার। রেডক্রসের এই সতর্কবার্তা গাজার মানুষের জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করেছে।
এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা অনেকের কাছে হতাশাজনক। বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে সবসময় কথা বলে, তারা গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে। তবে রেডক্রসের বক্তব্য স্পষ্ট—এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গাজার পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে।