শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:০১

মার্কিন পুরস্কার জুলাই কন্যাদের উৎসর্গ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৩০, ২০২৫ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ
মার্কিন পুরস্কার জুলাই কন্যাদের উৎসর্গ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

মার্কিন পুরস্কার জুলাই কন্যাদের উৎসর্গ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তবে এই পুরস্কারের গৌরব তিনি নিজের কাছে রাখেননি। তিনি এটি উৎসর্গ করেছেন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাহসী নারীদের—যাদের তিনি ‘জুলাই কন্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই ঘোষণা এসেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে, এবং এটি পুরো জাতির জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত।

এই পুরস্কার গ্রহণের পর অধ্যাপক ইউনূস এক হৃদয়স্পর্শী বার্তায় জুলাই কন্যাদের উদ্দেশে বলেছেন, “এই স্বীকৃতি তোমাদের জন্য। তোমাদের অসাধারণ সাহসিকতা, নেতৃত্ব, এবং অটল অঙ্গীকার এই পুরস্কারের প্রকৃত দাবিদার। ২০২৪ সালের সেই সংকটময় সময়ে তোমরা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছ, তা সত্যিকারের সাহসের উদাহরণ হয়ে থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “তোমরা শুধু প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠোনি, একটি অস্থির সময়ে জাতির জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছিলে।”

অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তোমরা যখন রাস্তায় নেমেছিলে, তখন সহিংস দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিলে। নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের মধ্যেও তোমরা পুরুষ সংগ্রামীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছ। অনেক সময় তাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছ।” তিনি সেই দিনগুলোর কথা মনে করে বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবুও তোমরা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে গেছ। নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করেছ, যা বিশ্বকে অবাক করেছে।”

এই গণ-অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলন সরকারের পতন ঘটায়। এই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। তারা শুধু প্রতিবাদে অংশ নেয়নি, অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্বও দিয়েছে। রাস্তায় গুলি, লাঠি, টিয়ার গ্যাসের মধ্যেও তারা পিছু হটেনি। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “তোমাদের শক্তি, দৃঢ়তা, এবং অটল সংকল্প বাংলাদেশের মানুষকে তো বটেই, বিশ্বের অগণিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেও অনুপ্রাণিত করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “তোমাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে, ন্যায়বিচারের পথ কখনো সহজ নয়। কিন্তু তোমরা প্রমাণ করেছ, এই পথ সার্থক। তোমরা বিশ্বকে দেখিয়েছ, সত্যিকারের নেতৃত্ব কী, ত্যাগ কী।” তিনি বলেন, “তোমাদের সাহসের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ তৈরির পথ খুলে গেছে। আমি এই পুরস্কারটি তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি, কারণ এটি তোমাদেরই প্রাপ্য।”

অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার তোমাদের পাশে আছে। আমরা একসঙ্গে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, এবং স্বাধীনতার সেই আদর্শের দিকে এগিয়ে যাব, যা তোমরা এত সাহসের সঙ্গে রক্ষা করেছ।” তিনি ভবিষ্যতের কথা তুলে বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা তোমাদের সম্মুখসারিতে দেখতে চাই। তোমরা এই জাতির কেন্দ্রে থাকবে। তোমাদের এই অসাধারণ অর্জনের জন্য অভিনন্দন। তোমরা পুরো বাংলাদেশকে গর্বিত করেছ।”

এই পুরস্কার উৎসর্গের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সামনে জুলাই কন্যাদের গল্প তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা যে আন্দোলন করেছ, তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ন্যায়বিচারের জন্য লড়তে থাকা মানুষের জন্য একটি প্রেরণা।”

এই ঘটনা বাংলাদেশের নারীদের শক্তির আরেকটি প্রমাণ। জুলাই কন্যারা প্রমাণ করেছেন, তারা শুধু ঘরে নয়, রাস্তায়ও নেতৃত্ব দিতে পারেন। অধ্যাপক ইউনূসের এই উৎসর্গ তাদের সেই সাহসকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে। এখন সবার প্রত্যাশা, এই সাহসী নারীরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে আরও বড় ভূমিকা রাখবেন। আমরা তাদের জন্য গর্বিত, এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই গল্প শুধু জুলাই কন্যাদের নয়, এটি আমাদের সবার।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত