ইরাকে প্রবল বালুঝড়ে ৩,৭০০ জনেরও বেশি হাসপাতালে ভর্তি
ইরাকের রাজধানী বাগদাদসহ বিভিন্ন প্রদেশে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রবল বালুঝড় আঘাত হেনেছে, যার ফলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে কমপক্ষে ৩,৭৪৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈফ আল বদর রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আইএনএ-কে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাঈফ আল বদর জানান, “মঙ্গলবার বাগদাদ এবং দেশের অন্যান্য প্রদেশে তীব্র বালুঝড় বয়ে গেছে। এর প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৩,৭৪৭ জন।” তিনি বলেন, অসুস্থদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিলেন বাগদাদ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আল মুথান্না প্রদেশে। বাগদাদে ১,০১৪ জন এবং আল মুথান্নায় ৮৭৪ জন এই ঝড়ের কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি রোগীরা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এসেছেন।
মুখপাত্র জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অল্প কিছু গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, যাদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “যারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন, তাদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ, মেডিকেল সরঞ্জাম এবং অক্সিজেন রয়েছে।” স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, এই ঝড়ে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
বালুঝড়ের কারণে ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বাগদাদ এবং অন্যান্য শহর কমলা রঙের ধুলোর চাদরে ঢেকে গেছে। এই ঝড়ের প্রভাবে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নাজাফ ও বসরার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইরাকে বালুঝড় কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধরনের ঝড়ের তীব্রতা এবং ঘনত্ব বেড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি দেশের মধ্যে ইরাক অন্যতম। দেশটি প্রায়ই তীব্র তাপপ্রবাহ, পানির সংকট এবং বালুঝড়ের মুখোমুখি হয়।
২০২২ সালে ইরাকে একটি ভয়াবহ বালুঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ শ্বাসকষ্টের কারণে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এবারের ঝড়ে শিশু এবং বয়স্করা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়লেও চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইরাকের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে। তবে ধুলোর মাত্রা এখনো বাতাসে বেশি থাকায় জনগণকে মাস্ক পরা এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই ঝড়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ইরাকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বালুঝড় মোকাবিলায় পরিবেশ সংরক্ষণ, বনায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। ইরাকের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে দেশটিতে এ ধরনের ধূলিঝড় আরও ঘন ঘন দেখা যেতে পারে।
ইরাকের জনগণ এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে। তবে এই বালুঝড় শুধু স্বাস্থ্য সংকটই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকির একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তাও বহন করছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি