বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ‘চিকেন নেক’ করিডরের নিরাপত্তা বাড়াল ভারত
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করা সীমান্তবর্তী ‘চিকেন নেক’ করিডরের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ভারত। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং চীনের কাছ থেকে বিনিয়োগ চাওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, এই খবর প্রকাশ করেছে।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ড. ইউনূসের চীন সফরের পর ‘চিকেন নেক’ নিয়ে ভারতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই করিডরটির আসল নাম শিলিগুঁড়ি করিডর, তবে ভারতের মানচিত্রে এটি মুরগির গলার মতো দেখতে বলে একে ‘চিকেন নেক’ বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এই সরু ভূখণ্ডটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সীমান্তের কাছে। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোকে যুক্ত করার একমাত্র স্থলপথ। সম্প্রতি ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর ভারত এখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অঞ্চলকে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে বিবেচনা করে। সেনা সূত্রে জানা গেছে, ‘চিকেন নেক’ দিয়ে সেভেন সিস্টার্সে পণ্য পরিবহন এবং যাতায়াত হয়। এই করিডরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ত্রিশক্তি কর্পস, যাদের সদর দপ্তর সুকনায়। তাদের হাতে রয়েছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র—রাফায়েল যুদ্ধবিমান, ব্রাহ্মোস মিসাইল এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর দাবি, এখানে যেকোনো হুমকি মোকাবিলার জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান সম্প্রতি বলেছেন, “‘চিকেন নেক’ আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল। পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে দ্রুত সেনা এনে মোতায়েন করা সম্ভব।” এই করিডরে আরও সেনা পাঠানো হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়ানো যায়। এই পদক্ষেপের পেছনে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন গতিবিধি একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
‘চিকেন নেক’ ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া, আর এর চারপাশে প্রতিবেশী দেশগুলোর উপস্থিতি ভারতকে সবসময় সতর্ক রাখে। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ড. ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” ভারত মনে করে, এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়লে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
স্থানীয়রা জানান, “এখানে সেনার উপস্থিতি বেড়েছে। রাস্তায় টহল, চেকপোস্ট—সবই বাড়ানো হয়েছে।” ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, “এটি আমাদের দেশের জন্য লাইফলাইন। এখানে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যায় না।” ত্রিশক্তি কর্পসের আধুনিক অস্ত্র আর দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা এই অঞ্চলকে আরও শক্তিশালী করেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনূসের চীন সফর এবং সেভেন সিস্টার্স নিয়ে তার মন্তব্য এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেব না।”
‘চিকেন নেক’ এখন ভারতের সামরিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই অঞ্চলে সেনা মোতায়েন বাড়ানোর ফলে স্থানীয়রা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। এই করিডর শুধু একটি রাস্তা নয়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার একটি প্রতীক।