সাংবাদিকের জমির মাটি বিক্রির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার
সিরাজগঞ্জে এক সাংবাদিকের জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পাভেল মিয়াকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাভেল উল্লাপাড়া উপজেলার চর ঘাটিনা গ্রামের বাসিন্দা এবং আব্দুল মতিনের ছেলে। এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পাভেল মিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার শিকার সাংবাদিক রাহিদ রনি বলেন, “আমার জমি থেকে অনুমতি ছাড়া মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে। এই অভিযোগে পাভেলকে বহিষ্কার করায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানাই।” তিনি গত সোমবার (৭ এপ্রিল) ফেসবুক লাইভে এসে এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, পাভেল তার জমিতে ৬ ফুট গভীর গর্ত করে প্রায় তিন লাখ টাকার মাটি বিক্রি করেছেন।
রাহিদের এই ফেসবুক লাইভ সিরাজগঞ্জে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃত্বের কাছে বিচার চান। এরপরই এলাকায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়। একজন স্থানীয় বলেন, “এটা শুনে আমরা হতবাক। এমন কাজ কেউ কীভাবে করে?” সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, “সাংবাদিকের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করি। তারপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বহিষ্কারের সুপারিশ করি।” তিনি যোগ করেন, “এই সিদ্ধান্ত সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। পাভেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।”
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয়রা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “ছাত্রদলের এমন দ্রুত পদক্ষেপ ভালো লাগল। এটা অন্যদের জন্য শিক্ষা।” আরেকজন বলেন, “পাভেলের এমন কাজ আমাদের মাথা নিচু করেছে।”
রাহিদ রনি ঢাকায় কর্মরত একজন সাংবাদিক। তিনি বলেন, “আমার জমি আমার সম্পদ। এভাবে কেউ ক্ষতি করবে, ভাবিনি।” ফেসবুক লাইভে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই।” তার এই কথা অনেকের মনে দাগ কেটেছে।
বহিষ্কারের পর পাভেল মিয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি এলাকায় তেমন একটা দেখা দিচ্ছেন না। একজন প্রতিবেশী বলেন, “এটা তার জন্য লজ্জার। কীভাবে এমন কাজ করল, বোঝা যায় না।”
ছাত্রদলের এই সিদ্ধান্ত সংগঠনের ভেতর শৃঙ্খলার বার্তা দিয়েছে। জুনায়েদ বলেন, “আমরা কোনো অন্যায় মেনে নেব না। সংগঠনের সম্মান রক্ষাই আমাদের লক্ষ্য।” এই ঘটনা অন্য নেতাকর্মীদের জন্যও সতর্কবার্তা।
সাংবাদিক রাহিদ বলেন, “আমি খুশি যে ন্যায় পেয়েছি। এটা সবাইকে সৎ থাকতে শেখাবে।” এই ঘটনা সিরাজগঞ্জে দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকবে।