বৈঠকের সপ্তাহ না পেরোতেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সদ্য অনুষ্ঠিত ইতিবাচক বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশকে দেওয়া তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। সোমবার (৮ এপ্রিল) ভারতের রাজস্ব বিভাগ ২০২০ সালের ২৯ জুন প্রকাশিত সার্কুলার বাতিল করে নতুন এক সার্কুলারে এ সিদ্ধান্ত জানায়। ওই সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল, যদিও ব্যবহারিকভাবে এটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়নি। তবুও আঞ্চলিক সহযোগিতার দৃষ্টিকোণে এই সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ।
ঘটনাটিকে ঘিরে আলোচনায় আসে গত সপ্তাহে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদি-ইউনূস বৈঠক। ৪০ মিনিটব্যাপী ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিবৃতিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সরকারি সূত্রগুলোতে অসন্তোষ দেখা যায়। ভারতীয় সূত্রগুলো দাবি করে, বাংলাদেশের বিবৃতি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এ ঘটনার কয়েকদিন পরই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায়, অনেকেই মনে করছেন দিল্লি এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে চায়।
এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিকরা সতর্ক মন্তব্য করেছেন। একজন বলেন, “কূটনীতি কখনও মিডিয়ার মাধ্যমে করা যায় না। স্পর্শকাতর বিষয়ে সাবধানতাই শ্রেয়। উভয়পক্ষের মিডিয়াতে কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে সাবধান থাকা উচিত।” আরেকজনের মতে, বাতিল হওয়া সুবিধাটির ব্যবহারিক প্রভাব কম হলেও ভারতের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের বড় ক্ষতি হবে না এবং দিল্লি সেটি জেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের রাজস্ব বিভাগের ১৩/২০২৫ নম্বর সার্কুলারে বলা হয়েছে, ২৯/২০২০ নম্বর সার্কুলার বাতিল করে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা রহিত করা হলো, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে যেসব পণ্য ইতিমধ্যে ভারতীয় সীমান্তে ঢুকেছে, সেগুলোকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। মোদি-ইউনূস বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত থাকলেও, দুই দেশের মিডিয়াতে বৈঠকসংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এ প্রেক্ষাপটেই আসে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত।
বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে কি না—এই প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এক সাবেক কূটনীতিক বলেন, “বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনার ফেরত আসা এবং ভারতের জন্য সংখ্যালঘু প্রসঙ্গ—দুটিই স্পর্শকাতর। বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক, তবে কীভাবে তা প্রকাশ করা হচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
সম্পর্ক উন্নয়নে উভয়পক্ষকেই এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন বিশ্লেষকেরা। শুধু একতরফা আগ্রহে কূটনৈতিক সম্পর্ক এগোবে না—এটি এখন স্পষ্ট। সংযত আচরণ এবং বিবেচনা করেই এগিয়ে যেতে হবে দুই প্রতিবেশীকে।