ট্রাম্পের ৭ লাখ ৪১ হাজার ডলার জরিমানা
লন্ডনের হাইকোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ডলার জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের জন্য আইনি ও আর্থিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনার শুরু ২০১৭ সালে। সে সময় যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এম সিক্সটিনের সাবেক কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার স্টিল ট্রাম্প সম্পর্কে একটি বিতর্কিত প্রবন্ধ লেখেন। ট্রাম্প তখন প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। জানুয়ারিতে প্রকাশিত সেই প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় রাশিয়ার গুপ্তচর ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে সমঝোতার ফল। এমনকি ২০১৩ সালে মস্কো সফরের সময় রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি’র সঙ্গে তার গোপন চুক্তি হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়।
প্রবন্ধে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও রগরগে অভিযোগ ছিল। স্টিল লিখেছিলেন, ট্রাম্পের অতীতে যৌন অসদাচরণের ঘটনা রয়েছে। এই সব অভিযোগ শুনে ট্রাম্প রেগে আগুন হয়ে বলেছিলেন, “এসব সর্বৈব মিথ্যা।” তিনি প্রবন্ধটিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু বিতর্ক থামেনি।
২০২২ সালে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের তথ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় স্টিলের মালিকানাধীন কোম্পানি অরবিস বিজনেস ইন্টেলিজেন্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তিনি দাবি করেন, এই প্রবন্ধ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার। কিন্তু অরবিস বলে, “প্রবন্ধটির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।” তারা আরও জানায়, তৎকালীন ডেমোক্রেটিক সরকার এই প্রবন্ধকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
মামলা শুরুর সময়ই লন্ডন হাইকোর্টের বিচারক ক্যারেন স্টেইন সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই অভিযোগের তেমন কোনো মেরিট নেই।” ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার মন্তব্য করেন, “এই মামলা ব্যর্থ হতে চলেছে।” শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত রায়ে ট্রাম্প হেরে যান। আদালতের নির্দেশ—তাকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে।
এই রায় ট্রাম্পের জন্য বড় লজ্জার। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জরিমানার এই টাকা মামলার খরচ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। ট্রাম্পের আইনি দল এখনও এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে এই ঘটনা তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ইমেজে আঘাত হানতে পারে।
স্টিলের প্রবন্ধ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চললেও, এই মামলা তার সত্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে ট্রাম্পের জন্য আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লন্ডন থেকে আসা এই রায় যুক্তরাষ্ট্রে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, “এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।” কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, “এটা তার অহংকারের ফল।”
৭ লাখ ৪১ হাজার ডলার বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি ৮৫ লাখ। এই বিশাল অঙ্কের জরিমানা ট্রাম্প কীভাবে নেবেন, সেটাই এখন সবার কৌতূহল। মামলা হেরে তিনি নীরব থাকলেও, এর প্রভাব তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে পড়তে পারে। লন্ডনের এই রায় বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, আর ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রয়েছে সবার।