টি-ব্যাগে চা পানে স্বাস্থ্যঝুঁকি: গবেষণায় উঠে এলো বিপজ্জনক তথ্য
টি-ব্যাগে চা পানের অভ্যাস আধুনিক জীবনে বেশ জনপ্রিয়। অফিস, বাসা কিংবা আড্ডায় সময় বাঁচাতে এটি অনেকের প্রিয়। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা গেছে, এই অভ্যাস স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। বার্সেলোনার অটোনোমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে যে বাণিজ্যিক টি-ব্যাগ থেকে নির্গত মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
টি-ব্যাগ থেকে প্লাস্টিক নির্গমনের প্রমাণ
গবেষণায় দেখা গেছে, টি-ব্যাগ তৈরি করতে ব্যবহৃত উপকরণ যেমন পলিপ্রোপিলিন, সেলুলোজ, এবং নাইলন-৬—এইসব উপাদান থেকে লাখ লাখ ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা নির্গত হয়।
- পলিপ্রোপিলিন: প্রতি মিলিলিটার চায়ের পানিতে ১.২ বিলিয়ন প্লাস্টিক কণা।
- সেলুলোজ: প্রতি মিলিলিটার পানিতে ১৩৫ মিলিয়ন প্লাস্টিক কণা।
- নাইলন-৬: ৮.১৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক কণা।
এই কণাগুলো অন্ত্রে শোষিত হয়ে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্ষতিকর প্রভাব
গবেষণায় উঠে এসেছে, প্লাস্টিক কণাগুলো অন্ত্রের মিউকাস উৎপাদনকারী কোষে প্রবেশ করে কোষের নিউক্লিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এটি কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশেও টি-ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে। তবে গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এ অভ্যাসে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। দেশীয় বাজারে সহজলভ্য টি-ব্যাগেও একই ধরনের উপকরণ থাকতে পারে।
ঝুঁকি এড়ানোর উপায়
বিশেষজ্ঞরা টি-ব্যাগের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে চা পানের পরামর্শ দিয়েছেন।
- পাতা চা ব্যবহার করুন।
- ধাতব বা কাপড়ের ছাঁকনি দিয়ে চা বানান।
- পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি টি-ব্যাগ বেছে নিন।
সচেতনতা জরুরি
গবেষকরা বলছেন, মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিকের মানব শরীরের উপর প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এই গবেষণার ভিত্তিতে নীতিমালা তৈরি হতে পারে। তবে এর আগ পর্যন্ত, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চা তৈরির অভ্যাস গড়ে তোলা এবং টি-ব্যাগের ব্যবহারে সতর্ক হওয়া জরুরি। চা যেন আমাদের জীবনে আরাম আনে, বিপদ নয়—এটাই নিশ্চিত করতে হবে।