শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১২

চীনের উপহারে রংপুরে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা তীরে পরিদর্শন

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:২১ অপরাহ্ণ
চীনের উপহারে রংপুরে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা তীরে পরিদর্শন

চীনের উপহারে রংপুরে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা তীরে পরিদর্শন

চীনের অর্থায়নে রংপুরে এক হাজার শয্যার অত্যাধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী চর কলাগাছি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদীসহ স্থানীয় প্রতিনিধিরা এই পরিদর্শনে অংশ নেন।

পরিদর্শনের সময় চর কলাগাছি এলাকার ১০০ একর খাস জমির মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২০ একর জমি বরাদ্দের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। আগামী দিনে চীনের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে এসে হাসপাতালের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান চূড়ান্ত করবে বলে জানানো হয়েছে।

হাসপাতাল নির্মাণের তাৎপর্য

বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীন সরকারের উপহার হিসেবে এই হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটি তিস্তা প্রকল্প এলাকার কাছাকাছি স্থাপনের পরিকল্পনা নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এই হাসপাতাল রংপুর বিভাগের প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবার দুয়ার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “ভারত সম্প্রতি চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চীনের এই উদ্যোগ সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটি বড় পদক্ষেপ। এই হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।”

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান সজীব বলেন, “রংপুর বিভাগে উন্নত চিকিৎসা সুবিধার অভাব দীর্ঘদিনের সমস্যা। হৃদরোগ, ক্যান্সার বা জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য মানুষকে ঢাকা বা বিদেশে যেতে হয়। এই হাসপাতাল নির্মিত হলে স্থানীয়ভাবে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে, যা উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য খাতে বিপ্লব ঘটাবে।”

স্থানীয়দের প্রত্যাশা

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “তিস্তা তীরের মানুষ দরিদ্র। আমাদের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। এই এলাকায় পর্যাপ্ত খাস জমি এবং ভালো যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতাল হলে শুধু চিকিৎসা সুবিধাই নয়, স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে। তিস্তার পাড়ের মানুষকে আর জীবিকার জন্য ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতে হবে না।”

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তিস্তা নদীর চর এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের ফলে শুধু চিকিৎসা সেবাই নয়, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। অনেকে আশা করছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গাচড়ার মতো প্রত্যন্ত এলাকা উন্নয়নের মূলধারায় আরও বেশি যুক্ত হবে।

প্রকল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, “তিস্তা নদীর চর এলাকাগুলোতে হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করা হচ্ছে। চর কলাগাছির এই স্থানটি তার অবস্থান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উপযুক্ত। এখানে হাসপাতাল হলে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে।”

তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তিস্তা নদীর চর এলাকা প্রাকৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, এবং নির্মাণকাজে পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে জমি বরাদ্দ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, খাস জমি ব্যবহারের ফলে স্থানীয় কৃষক বা বাসিন্দাদের জীবিকা প্রভাবিত হতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পটি স্থানীয়দের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এগোবে।

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতিফলন

এই হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার একটি উদাহরণ। চীন ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সড়ক, সেতু এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এই হাসপাতাল প্রকল্পটি দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি শুধু চিকিৎসা সেবার জন্য নয়, বরং দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবেও গণ্য হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রংপুরে এই হাসপাতাল নির্মিত হলে তা উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হবে। এটি স্থানীয়দের ঢাকা বা বিদেশে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ যাত্রার প্রয়োজনীয়তা কমাবে। একই সঙ্গে, হাসপাতালটি চিকিৎসা পর্যটনের সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে, যা অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

পরিদর্শনের পর প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ হিসেবে চীনা প্রতিনিধি দলের সফর এবং স্থান চূড়ান্তকরণের কাজ শুরু হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালটি নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব নকশা ব্যবহার করা হবে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হবে।

তিস্তা তীরের এই হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ রংপুরের মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি তাদের জীবনমান উন্নত করবে এবং উত্তরাঞ্চলকে স্বাস্থ্য সেবায় একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। প্রকল্পটি সফল হলে তা চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি