শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| ভোর ৫:২৬

গাজায় ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার পর ভুল স্বীকার করল ইসরায়েল

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৪:০১ অপরাহ্ণ
গাজায় ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার পর ভুল স্বীকার করল ইসরায়েল

গাজায় ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার পর ভুল স্বীকার করল ইসরায়েল

দক্ষিণ গাজার রাফাহর কাছে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তাদের সৈন্যরা ভুল করেছে। গত ২৩ মার্চ প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের অগ্নিনির্বাপক গাড়ির একটি বহরের ওপর এই হামলা চালানো হয়। এই ঘটনা নিয়ে প্রথমে ইসরায়েল দাবি করেছিল, গাড়িগুলো অন্ধকারে হেডলাইট ছাড়া সন্দেহজনকভাবে এগোচ্ছিল। কিন্তু এখন তারা স্বীকার করেছে, সেই দাবি ভুল ছিল।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রথমে জানায়, গাড়িগুলোর চলাচলের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় বা অনুমোদন ছিল না। তবে নিহত এক প্যারামেডিক, রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনে ধরা পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গাড়িগুলোর লাইট জ্বালানো ছিল। এই চিকিৎসাকর্মীরা আহতদের সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা ওই ভিডিওতে ভোরের আগে গাড়িগুলো রাস্তায় থামতেই গুলির শব্দ শোনা যায়।

পাঁচ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ভিডিওতে রিফাত রাদওয়ানকে তার শেষ প্রার্থনা পড়তে শোনা যায়। এরপর ইসরায়েলি সৈন্যদের কণ্ঠস্বর ধরা পড়ে, যারা গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছিল। আইডিএফ-এর এক কর্মকর্তা শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, এর আগে তারা একটি গাড়িতে থাকা তিনজন হামাস সদস্যের ওপর গুলি চালিয়েছিল। যখন চিকিৎসাকর্মীদের বহর ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, আকাশ থেকে নজরদারি চালানো পর্যবেক্ষকরা সৈন্যদের সতর্ক করে যে, কনভয়টি ‘সন্দেহজনকভাবে’ এগোচ্ছে। সৈন্যরা ধরে নেয়, এটি তাদের ওপর হামলা হতে পারে, এবং গুলি চালিয়ে দেয়।

ইসরায়েল দাবি করেছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জন হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে এর কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। তারা এটাও স্বীকার করেছে, যাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, তারা নিরস্ত্র ছিল। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, গাড়িগুলো চিকিৎসা সেবার জন্য চিহ্নিত ছিল এবং কর্মীরা দূর থেকে দৃশ্যমান উজ্জ্বল পোশাক পরে ছিলেন। ইসরায়েল এখন বলছে, সৈন্যদের দেওয়া ভুল তথ্যের কারণে এই হামলা হয়েছে।

আইডিএফ জানিয়েছে, হামলার পর নিহতদের মরদেহ বন্য প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচাতে বালির নিচে পুঁতে রাখা হয়। পরদিন রাস্তা পরিষ্কার করতে গাড়িগুলো সরিয়ে কবর দেওয়া হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পরও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। পরে একটি ত্রাণদল মরদেহ খুঁজে পায় এবং রিফাতের মোবাইল ফোন থেকে এই ভিডিও উদ্ধার করে।

কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের হাত বাঁধা ছিল বা খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করেছেন। আইডিএফ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা এই ঘটনার ‘বিশদ তদন্ত’ করবে, যাতে পুরো ঘটনাপ্রবাহ এবং সৈন্যদের সিদ্ধান্ত বোঝা যায়। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্টসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৫০ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই ঘটনা গাজার চলমান সংকটকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। রিফাতের ভিডিওতে ধরা পড়া শেষ মুহূর্তগুলো শুনলে যে কারো মন ভারী হয়ে যায়। তিনি প্রার্থনা করছিলেন, “হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো।” তারপর গুলির শব্দে সব শেষ।

এই হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে ক্ষোভ বাড়ছে। একজন ত্রাণকর্মী বলেন, “এরা জীবন বাঁচাতে গিয়েছিল, কিন্তু নিজেরাই প্রাণ হারাল।” ইসরায়েলের ভুল স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও, অনেকে মনে করেন, এই ঘটনার জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করা উচিত।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি