এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সাথে জড়িত: প্রধান উপদেষ্টা
এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, “এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ভবিষ্যৎ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।” এই বক্তব্য এশিয়ার আঞ্চলিক ঐক্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মতো বিষয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য। তিনি বলেন, “ভারতের বন্যা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করে, চীনের শিল্পায়ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ না করি, তাহলে আমাদের সবাইকে ভুগতে হবে।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। এই প্রেক্ষাপটে তিনি সার্ক ও আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিরা ড. ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। ভারতের প্রতিনিধি বলেন, “এশিয়ার অর্থনীতি বিশ্বের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। আমাদের সম্পর্ক জোরদার করা এখন সময়ের দাবি।” এদিকে, চীনের প্রতিনিধি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে এশিয়ার দেশগুলোর সংযোগ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪ সালে এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যের একটি বড় অংশ। ড. ইউনূস এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের তরুণ জনশক্তি এবং ভৌগোলিক অবস্থান এশিয়ার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।” তিনি প্রযুক্তি ও শিক্ষায় বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকলেও, ড. ইউনূস সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে বলেছেন। তিনি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত পানি বণ্টন বিরোধের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারি।”
অনুষ্ঠানে পরিবেশবিদরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এশিয়ার দেশগুলো একসঙ্গে কাজ না করলে বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো সমস্যা আরও তীব্র হবে। ড. ইউনূস এই বিষয়ে সম্মিলিত গবেষণা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের প্রস্তাব দেন।