গাজায় প্রতিদিন ইসরাইলি হামলায় হতাহত ১০০ শিশু: জাতিসংঘ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ শিশু হয় নিহত হচ্ছে, নয়তো গুরুতর আহত হচ্ছে। এই হৃদয়বিদারক তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের সংস্থা ইউ-এন-আর-ডব্লিউ-এ -এর প্রধান। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে শনিবার এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গাজার শিশুদের ওপর এই নির্মমতা যেন থামার নামই নিচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৮৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ২৮৭ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে শিশু ও নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের সংখ্যাই বেশি। এই নির্বিচার হামলায় গাজার জনজীবন যেন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
ইউ-এন-আর-ডব্লিউ-এ-এর প্রধান বলেছেন, “যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে গাজায় শিশুদের ওপর যে পরিমাণ অত্যাচার হচ্ছে, তা অকল্পনীয়।” ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এই শিশুরা যুদ্ধের কোনো পক্ষ ছিল না, তবু তাদের জীবন ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইউ-এন-আর-ডব্লিউ-এ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৮। তবে সরকারি মিডিয়া অফিসের হিসাব আরও ভয়াবহ—তারা বলছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ। তাদের বেশিরভাগকেই মৃত বলে ধরা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ বের করতে হিমশিম খাচ্ছে।
গাজার হাসপাতালগুলো এখন আহতদের ভিড়ে ঠাসা। চিকিৎসার অভাবে অনেকে মারা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, “প্রতিদিন বোমার শব্দে আমাদের জীবন কেঁপে ওঠে। আমরা বাঁচব কি মরব, কিছুই জানি না।” অনেক শিশু এতিম হয়ে গেছে। যারা বেঁচে আছে, তারা আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
জাতিসংঘ বারবার শান্তির আহ্বান জানালেও তা কার্যকর হচ্ছে না। গাজার মানুষ এখন যেন শুধু ধ্বংসের অপেক্ষায়। প্রতিদিন ১০০ শিশুর মৃত্যু বা আহত হওয়ার এই চিত্র বিশ্বের বিবেককে নাড়া দেওয়ার কথা। কিন্তু কবে এই নির্মমতা থামবে, তা কেউ জানে না।