ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধি, আইফোনের দাম হতে পারে প্রায় ৩ লাখ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, জাপানসহ কয়েকটি দেশের জন্য আলাদা পারস্পরিক শুল্কের কথাও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, যেসব দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক চাপিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এটি একটি জবাবি পদক্ষেপ। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ওপরই।
এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাঁজা থেকে শুরু করে দৌড়ানোর জুতা—সবকিছুর দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে প্রযুক্তি পণ্যের দাম নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অর্থনীতি বিশ্লেষক সংস্থা রোসেনব্লাট সিকিউরিটিজ জানিয়েছে, অ্যাপল যদি এই শুল্কের বোঝা গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেয়, তাহলে একটি লেটেস্ট মডেলের আইফোনের দাম ২ হাজার ৩০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় ৩ লাখ! এই দাম শুনে অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো রাতারাতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অন্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আর কেউ বিনিয়োগ করবেন না।” কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল, সেটা আর ফিরবে না।” কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আরও কঠোর মন্তব্য করে বলেছেন, “মুক্ত অর্থনীতির চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা পালন করত, তারা সেখান থেকে সরে গেছে।”
ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, “এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমি অন্য দেশগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাধ্য করছি।” কিন্তু হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, “শুল্ক আরোপের সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই।” এই দ্বিমুখী বক্তব্য বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, “তাহলে এর উদ্দেশ্য কী?”
এদিকে, এই শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিনিয়োগকারী ব্যাংক জেপি মরগ্যান জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে এ বছর শেষে বিশ্বব্যাপী মন্দার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই খবর বিশ্ব বাজারে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, “এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সবার জন্যই ক্ষতিকর হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা এখন দুশ্চিন্তায়। একজন বলেন, “আইফোনের দাম ৩ লাখ হলে কে কিনবে?” আরেকজন বলেন, “দৈনন্দিন জিনিসের দাম বাড়লে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।” অ্যাপল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দাম বাড়ানোর কথা না বললেও, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, “শুল্কের এই চাপ তারা গ্রাহকদের ওপরই ফেলবে।”
মিত্র দেশগুলোর ক্ষোভ, বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি আর সাধারণ মানুষের উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি যে আলোচনার কথা বলছেন, তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।