হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয় খাদ্যাভ্যাস
বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম। অনেক সময় হৃদরোগের কিছু প্রাথমিক সতর্কতা লক্ষণ দেখা দিলেও আমরা তা উপেক্ষা করি, যা ভবিষ্যতে বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তাই হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ এবং হৃদয়বান্ধব খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ সবসময়ই চিকিৎসার চেয়ে উত্তম।
হৃদরোগ বলতে হৃদযন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতাকে প্রভাবিতকারী বিভিন্ন সমস্যাকে বোঝায়। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, হৃদরোগের কিছু সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ হলো—
- বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি: অনেক সময় বুক ভারী লাগা বা চাপ অনুভব হতে পারে, যা হৃদরোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পূর্বাভাস।
- শ্বাসকষ্ট: বিশ্রামের সময় বা হালকা ব্যায়ামে শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
- পা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব: হৃদপিণ্ড রক্ত ঠিকভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরে তরল জমে এমন ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি: সাধারণ কাজেও অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।
- মাথা ঘোরা বা হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া: কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই এমন ঘটনা ঘটলে তা সতর্কবার্তা হতে পারে।
এই লক্ষণগুলো হৃদরোগের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ওপর নির্ভর করে ভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। যেমন, করোনারি ধমনী রোগে মূলত বুকে ব্যথা দেখা দেয়, আবার হার্ট ফেইলিওরে ক্লান্তি ও ফোলাভাব বেশি দেখা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো শনাক্ত করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।
হৃদরোগ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের করণীয়
- পুষ্টিকর ও সম্পূর্ণ খাবার গ্রহণ করুন: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম ও বীজ অন্তর্ভুক্ত করুন। এতে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদয় সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- ভালো চর্বি বেছে নিন: স্যামন মাছ, অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডোর মতো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদয়ের জন্য উপকারী। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
- লবণ ও চিনি কম খান: অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায় এবং চিনি ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়িয়ে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার ও মিষ্টি পানীয় কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন: নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করুন। লেবু মেশানো পানি বা ডাবের পানিও ভালো বিকল্প।
- পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন: অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো ও পরিমাণমতো খাওয়া হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং সুস্থ ওজন বজায় রাখতে সহায়ক।
সুস্থ হৃদয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সময়মতো সতর্কতা গ্রহণ ও জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তনই হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।