ইউরোপ আক্রমণে রাশিয়ার প্রস্তুতি নিয়ে হুঁশিয়ারি পোল্যান্ডের
ইউরোপে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কায় পোল্যান্ড ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ শিকোরস্কি সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন যে, রাশিয়া ইউরোপের দিকে আগ্রাসনের পরিকল্পনা করছে এবং এই হুমকি মোকাবিলায় পোল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২৪ মার্চ, ২০২৫-এ প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ইউরোপের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই সতর্কবার্তা এমন সময়ে এসেছে যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে এবং পোল্যান্ডের মতো ন্যাটো সদস্য দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক গত মাসে জানিয়েছিলেন যে, রাশিয়ার হুমকির মুখে দেশটি তার সেনাবাহিনীর আকার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে পোল্যান্ডের সেনাবাহিনীতে প্রায় ২ লাখ সৈন্য রয়েছে, যা ভবিষ্যতে ৫ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। টাস্ক বলেন, “রাশিয়ার আগ্রাসনের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। আমাদের প্রতিটি নাগরিককে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।” এই লক্ষ্যে পোল্যান্ড সরকার প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার একটি আইন প্রণয়নের কথাও ভাবছে। এমনকি, ভবিষ্যতে নারীদেরও এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ ইউরোপে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে, কালিনিনগ্রাদে রাশিয়ার ১০০টি পারমাণবিক রাশযুক্ত যুদ্ধাস্ত্র মজুতের খবর পোল্যান্ডকে আরও সতর্ক করে তুলেছে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিকোরস্কি গত জুনে বলেছিলেন, “রাশিয়া যদি বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে এবং কালিনিনগ্রাদে তার সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়, তবে এটি ইউরোপের জন্য সরাসরি হুমকি।” এছাড়া, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ঘটনায় পোল্যান্ডের আকাশসীমায় বেশ কয়েকবার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র অনুপ্রবেশ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই হুমকির প্রতি সজাগ। সম্প্রতি ইইউ ৮০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পোল্যান্ড এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের আবেদন জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাশিয়াকে আরও আগ্রাসী করে তুলতে পারে। পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, “ইউক্রেন যদি পরাজিত হয়, তবে রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হবে পোল্যান্ড।”
বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলো এন্টি-পার্সোনেল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছে, যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলকে শক্তিশালী করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বাইরেও তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন, এবং পোল্যান্ড তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রথম লক্ষ্য হতে পারে।
পোল্যান্ডের এই হুঁশিয়ারি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে ন্যাটো ও ইইউ-এর সমন্বিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি। তবে, পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে ইউরোপে বৃহৎ সংঘাতের আশঙ্কা অস্বীকার করা যায় না।