যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘোষণা, কঠোর হচ্ছে ভিসা যাচাই
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সাময়িকভাবে বিশ্বব্যাপী বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এর পাশাপাশি এবার চীন ও হংকং থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা “আগ্রাসীভাবে” বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে—চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের এই সিদ্ধান্তে এমন শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন, যাদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বা যারা “সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে” পড়াশোনা করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ভবিষ্যতে চীন ও হংকংয়ের শিক্ষার্থীদের ভিসা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াও আরও কঠোর করা হবে।
এই পদক্ষেপের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বাণিজ্যযুদ্ধ, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা ও ভিসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক বিগত মাসগুলোতে একেবারে নিন্মমুখী হয়ে পড়েছে।
এর আগে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক কূটনৈতিক বার্তায় বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে শিক্ষার্থী ভিসার নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে পরবর্তী কোনো নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার চীনা শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছিলেন, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে কোভিড-১৯ মহামারি এবং কূটনৈতিক জটিলতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সংখ্যা কমে এসেছে।
মার্কো রুবিও আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনায় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র দপ্তর মিলে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করবে। বিশেষ করে যারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অথবা স্পর্শকাতর বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, তাদের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল ও বহিষ্কারের উদ্যোগ নেয়, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই সেসব উদ্যোগ আদালতের রায়ে স্থগিত হয়ে যায়। পাশাপাশি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ শত শত মিলিয়ন ডলারের তহবিলও জব্দ করে রাখা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে হার্ভার্ডসহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিমাত্রায় উদারপন্থি মনে করে সমালোচনা করে আসছেন। তাঁর অভিযোগ, এসব বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিসেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ হারে ফি প্রদান করতে হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশই আসে এই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। নতুন এই সিদ্ধান্ত সেই অর্থনৈতিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
