বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মৃত্যু, আহত অন্তত ২০: দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গতকাল (১৫ মার্চ) বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম, নাটোর এবং নারায়ণগঞ্জের সংঘর্ষগুলোতে ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন এবং এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এসব সহিংসতা রাজনৈতিক উত্তেজনা, টিসিবির পণ্য ভাগাভাগি, এবং স্থানীয় বাস ডিপোর চলমান বিরোধের কারণে সৃষ্ট হয়েছে। এই ঘটনাগুলি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কমর উদ্দিন (৩৬) নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। রাউজান উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নের আমির হাটবাজার এলাকায় শনিবার রাতে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহত কমর উদ্দিন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন এবং যুবদল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ পাঠানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, নাটোরের বড়াইগ্রামে টিসিবির পণ্য ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন এবং বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষটি শুরু হয় যখন টিসিবির পণ্য বিতরণ চলাকালে একটি পক্ষ অবিক্রীত পণ্য নিজেরা ভাগ করে নেয়। এর প্রতিবাদ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়, যার ফলে গুরুতর আহত হন কয়েকজন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হলেও কোনো পক্ষই এখনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বাস ডিপো নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে, মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকায় বাস ডিপো সরানোর দাবিতে স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বিএনপির একাংশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। বাস ডিপোর অবৈধ কার্যক্রম নিয়ে এলাকাবাসী এবং স্বেচ্ছাসেবক দল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করতে চাইলেও বিএনপির স্থানীয় নেতাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা চলছে, এবং তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিএনপির মধ্যে সহিংসতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষত, টিসিবির পণ্য বিতরণ এবং স্থানীয় বাস ডিপো নিয়ে বিরোধগুলির মধ্যে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর একটি অশুভ ছায়া ফেলছে। এই ধরনের সহিংসতার কারণে দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
এখন পর্যন্ত এসব ঘটনাগুলোর পেছনের কারণ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো তাদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সহিংসতা দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা আগামী দিনে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপদজনক হতে পারে।
এসব ঘটনার পর, পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর ফলে দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, বিশেষত নির্বাচনকে সামনে রেখে।