গাজায় ইসরায়েলের নতুন তাণ্ডব, হুথিদের ওপর মার্কিন হামলা, নিহত শতাধিক
ফিলিস্তিনের গাজা ও ইয়েমেনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে অবরুদ্ধ গাজায় নির্বিচার বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বহু নিরীহ ফিলিস্তিনি, অন্যদিকে ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নারী-শিশুসহ নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত আরও রক্তাক্ত রূপ ধারণ করছে।
গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন সাংবাদিক ও কয়েকজন ত্রাণকর্মীও রয়েছেন। গাজার উত্তর বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহতদের অধিকাংশই সহায়তা কর্মী ছিলেন। একই দিনে জুহোর আদ-ডিকে আরও দুটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এছাড়া, বেইত লাহিয়ায় এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাফাহ শহরের তাল আস-সুলতান এলাকায় এক ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন, অন্যদিকে আল-শাকুশ এলাকায় আল-কান পরিবারের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার থেকে বোমা নিক্ষেপের ফলে আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছেন। তারা মূলত যুদ্ধকালীন মানবিক পরিস্থিতি নথিভুক্ত করছিলেন। দ্য প্যালেস্টানিয়ান জার্নালিস্ট প্রোটেকশন সেন্টার জানিয়েছে, ইসরায়েল গণহত্যামূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
অন্যদিকে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজে হামলার হুমকি দিলে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে শুরু হওয়া এই অভিযানে ইতোমধ্যে ২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও উত্তরাঞ্চলীয় সাদা শহরে মার্কিন হামলায় অন্তত ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। হুতি সমর্থিত আল-মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে, সাদায় চালানো হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পুরো অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযান কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চালানো হতে পারে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান ও ইউএসএস জর্জিয়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন এই অভিযানে সক্রিয় অংশ নিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই আগ্রাসনকে ‘যুদ্ধ উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা’ বলে আখ্যা দিয়েছে হুতি গোষ্ঠী। হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘গাজার জন্য আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে, আমেরিকার কাপুরুষোচিত হামলা আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আনবে না।’
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সমন্বিত হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনের এই হামলা-প্রতি-হামলার ধারাবাহিকতা আরও ভয়াবহ সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হলে এতে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
হুতিরা ইতোমধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে তারা। তবে এই উত্তেজনার মধ্যেই গাজার যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্থানীয় প্রশাসন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হামাসের দাবি, যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির আলোচনা ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না।
বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক অভিযান বন্ধের কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ফলে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ও গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।