ইউক্রেনের সুমিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ জন নিহত
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সুমিতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত এবং ১১৭ জনের বেশি আহত হয়েছেন। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে এই হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তা, সেনা সদস্য এবং বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। সুমির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দুপুরে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সুমিতে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তাদের একটি বৈঠককে লক্ষ্য করে দুটি ইসকান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তাদের দাবি, এই হামলায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন। তবে এই দাবির স্বাধীন কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত করা যায়নি।
হামলার পরপরই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাশিয়ার বিবৃতির পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্দ্রি সাইবিহা বলেন, “এই হামলা প্রমাণ করে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় নয়। এটি তাদের আগ্রাসী নীতির আরেকটি উদাহরণ।”
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ রুশ সংবাদমাধ্যম কমেরসেন্টকে বলেন, “সুমিতে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা তাদের পশ্চিমা সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র সেই বৈঠকস্থলকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল।” তবে তিনি এই ‘পশ্চিমা সহযোগীদের’ পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধের নামে নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া একটি জঘন্য অপরাধ। শুধুমাত্র নৃশংসরাই এমন কাজ করতে পারে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ইতালি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমি শুনেছি এই হামলা সম্ভবত ভুলবশত ঘটেছে। তবে এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা। আমরা এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।”
সুমি ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যা রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চল বারবার হামলার শিকার হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে, যার ফলে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এই হামলা ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সুমির এই সর্বশেষ হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে।
ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে। তবে শহরের পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত, এবং আরও হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ব নেতারা এই ঘটনার পর শান্তির আহ্বান জানালেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাত কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন এই অঞ্চলের পরিস্থিতি এবং এর মানবিক প্রভাবের দিকে।
সূত্র: রয়টার্স