৬ শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
গত ১৯ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে গত তিন মাসে দেশটির শতাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৬০০-এর বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে তাঁর প্রশাসন। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই গত বছর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে শুধু আন্দোলনই নয়, গণপরিবহনে টিকিট ছাড়া ভ্রমণ বা সড়কে গতিসীমা লঙ্ঘনের মতো ছোটখাটো অপরাধের কারণেও অনেকের ভিসা বাতিল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল ‘ইনসাইড হায়ার এড’-এর তথ্যের ভিত্তিতে ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, এমনকি অতি সামান্য অপরাধেও শিক্ষার্থীদের ভিসা হারাতে হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো স্পষ্টতই ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় সফরকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০০-এর বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘উন্মাদ’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, “আমরা প্রতিদিন এই কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ধরনের উন্মাদনা থেকে মুক্ত করা।” তাঁর এই বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ অনেকে মনে করছেন এটি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত।
ইনসাইড হায়ার এড শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে, ভিসা বাতিলের আগে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এমনকি বাতিলের কারণ সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক নথিও দেওয়া হয়নি। এই অস্বচ্ছতা শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে হতাশা ও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি সবসময়ই কঠোর। ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি অভিবাসীদের প্রতি কঠোর মনোভাবের জন্য পরিচিতি পান। এবারও তিনি ক্ষমতায় এসে একই পথে হাঁটছেন। ইতোমধ্যে হাজার হাজার নথিবিহীন অভিবাসীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমনকি তাঁর পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় বসবাসের অনুমতি পাওয়া প্রায় ১০ লাখ অভিবাসীকেও দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ভিসা বাতিলের ঘটনা সেই কঠোর নীতিরই একটি অংশ।
এই পদক্ষেপের ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকে তাদের শিক্ষাজীবন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তারা মনে করছেন তাদের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হুমকি হিসেবে দেখছেন।