পুষ্টিগুণে ভরপুর জাম: সুস্বাদু ফলটির ১২টি উপকারিতা
মৌসুমি ফল জাম এখন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। গাঢ় বেগুনি এই রসালো ও মিষ্টি ফলটি শুধু খেতে ভালো নয়, পুষ্টিগুণেও অনন্য। এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, প্রোটিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন এ ও নিয়াসিনসহ নানা উপকারী উপাদান থাকে। নিয়মিত জাম খাওয়ার রয়েছে বহু উপকারিতা, যেগুলো শরীরের নানা সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।
জামে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম জামে প্রায় ৫৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়, যা হৃদস্পন্দন ঠিক রাখে এবং স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন এবং অ্যান্থোসায়ানিন জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমায়। বিশেষ করে, ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ফুসফুসকে কিছুটা রক্ষা করতেও জাম কার্যকর।
জামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে, ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এতে পাওয়া যায় সায়ানিডিন নামের এক ধরনের নির্যাস, যা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আয়রন ও ভিটামিন সি-এর উপস্থিতি জামকে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর করে তোলে। এটি হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং রক্ত পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।
তীব্র গ্রীষ্মের রোদে ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। জাম খেলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে এবং দাগ কমে। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যাস্ট্রিনজেন্ট উপাদান ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে।
জামে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে থাকা ট্যানিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড অন্ত্রের প্রদাহ কমিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বাড়ায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর জাম। এতে থাকা জ্যাম্বোলিন ও জাম্বোসিন নামক যৌগ শর্করা শোষণের গতি ধীর করে দেয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে জাম। এর নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান দেহকে বাহ্যিক সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
ত্বক প্রাকৃতিকভাবে মসৃণ ও উজ্জ্বল হয় জাম খেলে। এতে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে, যা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়।
জাম প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এতে উচ্চমাত্রায় পানি ও মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে হাইড্রেশন বজায় রাখে। এটি লিভার ও কিডনি পরিষ্কার করতেও সহায়ক।
দাঁত ও মাড়ির জন্যও উপকারী জাম। এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁতকে মজবুত ও মাড়িকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওয়েবএমডি এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় জামকে একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর ফল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই এই মৌসুমে নিয়মিত জাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর-স্বাস্থ্য উপকৃত হবে নানাভাবে।