ঢাকায় ৪ দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু
ঢাকায় শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। এই বড় আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের ৬০০-এর বেশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ হলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এই ইভেন্ট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে।
এই সম্মেলনে বস্ত্র, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প আর ডিজিটাল ইকোনমিকে ফোকাস করা হচ্ছে। এই খাতগুলোকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে তুলে ধরা হবে। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এসব তথ্য জানান।
আশিক মাহমুদ বলেন, “প্রথম দিন আমরা দুটি ট্র্যাকে কাজ করব। একটি দল, ৬০-এর বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী নিয়ে, একটি স্পেশাল ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাবে। তারা কোরিয়ান ইপিজেড আর মিরসরাইয়ের স্পেশাল ইকোনমিক জোন ঘুরে দেখবেন। রাতে তারা ঢাকায় ফিরবেন।” তিনি জানান, “এই বিনিয়োগকারীরা এমন উদ্যোক্তা, যারা কারখানা স্থাপনের কথা ভাবছেন। তারা জায়গা-জমি আর সরকারের সাপোর্ট সিস্টেম দেখতে চান।”
সোমবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘স্টার্টআপ কানেক্ট’ নামে দিনব্যাপী একটি ইভেন্ট হবে। এতে স্টার্টআপ উদ্যোক্তা আর ভেঞ্চার বিনিয়োগকারীদের জন্য ম্যাচমেকিং, নেটওয়ার্কিং আর প্যানেল আলোচনার আয়োজন থাকবে। আশিক বলেন, “আমরা পুরো দিন স্টার্টআপদের ওপর ফোকাস করব। তরুণ উদ্যোক্তারা এখানে তাদের স্বপ্নের বিনিয়োগ খুঁজে পেতে পারেন।”
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যাবেন। আশিক বলেন, “তারা সেখানে কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। বিনিয়োগের জন্য কী সুযোগ আছে, তা নিজ চোখে দেখবেন।” এদিন দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলওর সঙ্গে আলোচনা হবে। তিনি জানান, “বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কী করা যায়, তা নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।”
বুধবার (৯ এপ্রিল) হবে সম্মেলনের উদ্বোধনী দিন। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সারাদিন ৩-৪টি সমান্তরাল ইভেন্ট চলবে। আশিক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। আমরা জানতে চাই, বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় করতে কী করা দরকার।” এদিন কিছু বিনিয়োগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে।
বিকেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলা’ হবে। ড. ইউনূস সেখানে তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। আশিক বলেন, “এটা আমাদের তরুণদের জন্য বড় সুযোগ। তারা তাদের আইডিয়া শেয়ার করতে পারবেন।” দ্বিতীয় ধাপে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি জানান, “কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।”
এই সম্মেলন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে। একজন ব্যবসায়ী বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগ এলে আমাদের শিল্প বাড়বে, চাকরি হবে।” আশিক মাহমুদ আশাবাদী, “এই চার দিনে আমরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সেরা গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে চাই।”
সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিনিয়োগের দুয়ার খুলতে চায়। ড. ইউনূসের উপস্থিতি এতে গতি যোগ করবে। সবার নজর এখন এই আয়োজনের ফলাফলের দিকে। বাংলাদেশ কতটা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। (সূত্র: বিডা)