গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। ফিলিস্তিনের এই অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে হামলা বন্ধ এবং ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবিতে বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। এই প্রতিবাদে শুধু মুসলিমরাই নয়, খ্রিস্টান, ইহুদি শান্তিকামী সংগঠনসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও যোগ দিয়েছেন।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে হাজারো মানুষ গাজায় অভিযান বন্ধ এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, এই মিছিলে ‘প্যালেস্টাইনিয়ান ইউথ মুভমেন্ট’, ‘দ্য পিপল’স ফোরাম’, ‘জিউয়িশ ভয়েস ফর পিস’ এবং ‘আনসার কোয়ালিশন’-এর মতো ৩০০-এর বেশি সংগঠন অংশ নেয়। মিছিলটি ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা আর নীরব থাকতে পারি না। গাজায় যা হচ্ছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
রোববার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামেন। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের প্রতিবাদে আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়। “জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই” এবং “মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক” স্লোগানে মুখরিত হয় এলাকা। একজন প্রতিবাদকারী বলেন, “ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের পেছনে আমেরিকার হাত। আমরা এটা মেনে নেব না।”
একই দিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স’ এই প্রতিবাদের আয়োজন করে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফ্রান্সিস ফরিদ আনাদোলুকে বলেন, “গাজায় যা হচ্ছে, তা যুদ্ধাপরাধ। ইসরায়েল শুধু গাজা দখল করতে চায় না, তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।” তিনি জানান, এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং সাড়াও পাচ্ছেন।
সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে। রোববার লক্ষাধিক মানুষ গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামেন। তারা ইসরায়েলের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। কাসাব্লাঙ্কা থেকে রাবাতে আসা মোহাম্মদ তৌসি আলজাজিরাকে বলেন, “এটা আর যুদ্ধ নয়, গাজাকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা। ট্রাম্প এতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বাইডেনের সময় লুকোচুরি ছিল, এখন সব খোলামেলা।”
এই সংঘাতের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এরপর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। ১৫ মাস ধরে চলা এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে ফের অভিযান শুরু হয়, গত ১৫ দিনে ১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
জিম্মিদের মধ্যে এখনো ৩৫ জন জীবিত থাকতে পারেন বলে ধারণা। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, “আমরা তাদের উদ্ধার করব।” কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, “হামাসকে দুর্বল না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।”
জাতিসংঘ বারবার হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে। গাজার এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাড়ি নেই, খাবার নেই। বিশ্ব কি আমাদের দেখছে না?”