এক যুগ পর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান রাজনৈতিক সংলাপ
এক যুগেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের পথ খুলতে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম ডেইলি পাকিস্তান শনিবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসে এই গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ এমন আলোচনা হয়েছিল। এবারের সংলাপে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সম্পর্কের রূপরেখা ঠিক করা হবে, যা দুই দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্কের দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়ই সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একে অপরের দিকে হাত বাড়িয়েছে। এই সংলাপ তারই একটি ফল। এর মূল লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। পাকিস্তানের পক্ষে এই সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ। তবে বাংলাদেশের পক্ষে কে প্রতিনিধিত্ব করবেন, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।
এই সংলাপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করা, যৌথ মিনিস্ট্রিয়াল কমিশন পুনর্বহাল করা এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া হবে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “এটি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের দূরত্ব কমিয়ে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে।”
এদিকে, আগামী ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফরকে পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, কূটনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীর করার একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইশহাক দারের এই সফর এই সংলাপের প্রেক্ষাপটে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, এই সফরে বাণিজ্যিক চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ইতিহাস জটিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বৈদেশিক নীতিতে পরিবর্তন আনে। পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার দিকে তারা মনোযোগ দেয়। এছাড়া চীনের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে এই সরকার।
এই সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। একজন কূটনীতিক বলেন, “দুই দেশই এখন বুঝতে পারছে, অতীতের দ্বন্দ্ব ভুলে সামনের দিকে এগোনোর সময় এসেছে।”
বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হতে পারে। পাকিস্তানের তুলা ও টেক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের জন্য উপকারী হতে পারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ওষুধ ও পাটজাত পণ্য পাকিস্তানের বাজারে চাহিদা রাখে। এই সংলাপে এসব বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংলাপকে একটি “ইতিহাস গড়ার সুযোগ” হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, “এটি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াবে।” বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না এলেও, সংলাপের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ না হওয়ায় সম্পর্কে এক ধরনের স্থবিরতা ছিল। এবারের এই উদ্যোগ সেই বরফ গলাতে পারে।