যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে বন্দুক হামলায় নিহত ৩, আহত আরও ১৫
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যে আরেকটি ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় বিশ্ববাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শনিবার (২২ মার্চ) রাতে লাস ক্রুসেস শহরে একটি কার মিটআপে এলোপাতাড়ি গুলি চালানোর ঘটনায় তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার ক্রমবর্ধমান আতঙ্ককে আরও একবার সামনে এনেছে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী এখনও পলাতক, এবং তাকে ধরতে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চলছে। এই হামলার পেছনের উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট না হলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
লাস ক্রুসেস পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে এই হামলা সংঘটিত হয়। গাড়ি উৎসাহীদের একটি জমায়েতে হঠাৎ করেই গুলির শব্দে স্থানটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একজন বা একাধিক বন্দুকধারী ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। নিহতদের মধ্যে দুজন ১৯ বছর বয়সী এবং একজন ১৬ বছরের কিশোর রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, এবং তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা গাড়ি নিয়ে আলোচনা করছিলাম, হঠাৎ গুলির শব্দ শুনলাম। সবাই দৌড়ে পালাতে শুরু করল, কিন্তু অনেকেই আর উঠতে পারল না। রাস্তায় রক্ত আর চিৎকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।” এই হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে এবং আহতরা মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।
লাস ক্রুসেস পুলিশ বিভাগ ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে হামলাকারী বা হামলাকারীরা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা হতে পারে। তবে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরতে সব ধরনের সংস্থান ব্যবহার করছি। জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান, যারা এই ঘটনার কোনো তথ্য জানেন, তারা যেন এগিয়ে আসেন।” ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে, যা তদন্তে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউ মেক্সিকো মেক্সিকো সীমান্তের কাছে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলে মাদক কার্টেলের প্রভাব দীর্ঘদিনের। অনেকে মনে করছেন, এই হামলার পেছনে কার্টেল সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করেছেন, এটি কার্টেলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের ফল হতে পারে। তবে পুলিশ এখনও এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এখানে কার্টেলের প্রভাব অনেক। তারা যে কোনো সময় যে কাউকে টার্গেট করতে পারে। আমরা আর নিরাপদ নই।” বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার সঙ্গে মাদক ব্যবসার যোগসূত্র দীর্ঘদিনের, এবং নিউ মেক্সিকোর মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো এর প্রধান শিকার।
এই হামলার পর লাস ক্রুসেসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছেন, অনেকে তাদের প্রিয়জনের খোঁজে ছুটছেন। একজন নিহতের মা বলেন, “আমার ছেলে শুধু গাড়ি দেখতে গিয়েছিল। ওর কী দোষ ছিল? এই সহিংসতা কেন থামছে না?”
স্থানীয়রা বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “এত সহজে বন্দুক হাতে পাওয়া যায় বলেই এসব ঘটছে। সরকার কি আমাদের রক্ষা করবে না?” যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা নিয়ে বিতর্ক আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে এই ঘটনার পর।
বিবিসি’র মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার “অব্যাহত দুঃস্বপ্ন” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২০০টিরও বেশি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। একটি সংস্থার মুখপাত্র বলেন, “এই ধরনের ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই একটি সতর্কবার্তা।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যতক্ষণ না বন্দুক কেনার প্রক্রিয়া কঠোর করা হবে এবং মাদক কার্টেলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ততক্ষণ এই ধরনের ঘটনা থামবে না। তবে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাবে সমাধান এখনও দূরের স্বপ্ন।