ট্রাম্পের নির্দেশে নাসার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কর্মকর্তা নীলা রাজেন্দ্র বরখাস্ত
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের ডাইভার্সিটি, ইকুইটি এবং ইনক্লুশন (ডিইআই) বিভাগের প্রধান নীলা রাজেন্দ্রকে বরখাস্ত করেছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারী কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের কারণে চাকরি হারিয়েছেন। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডিইআই কর্মসূচি বন্ধ করার এবং এই প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত কর্মীদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
নীলা রাজেন্দ্র নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-তে ডিইআই বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ কার্যকর হওয়ার পর নাসা প্রথমে তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। তাঁর পদবী পরিবর্তন করে “হেড অব অফিস অব টিম এক্সেলেন্স অ্যান্ড এমপ্লয়ি সাকসেস” করা হয় এবং তাঁর জন্য একটি নতুন বিভাগও তৈরি করা হয়। তবে তাঁর মূল দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে এই পদক্ষেপ টেকসই হয়নি, এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
জেপিএল-এর পরিচালক লরি লেশিন গত সপ্তাহে কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো এক ই-মেইলে বলেন, “নীলা রাজেন্দ্র আর জেপিএল-এ কর্মরত নন। তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে অবদান রেখেছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁর ভবিষ্যতের জন্য আমরা শুভকামনা জানাই।” ব্রিটিশ সংবাদপত্র ডেইলি মেইল এই ই-মেইলের উল্লেখ করে তাঁর বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নীলা রাজেন্দ্রের বরখাস্তের ঘটনাটি নাসার ডিইআই কর্মসূচির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বড় প্রভাবের প্রতিফলন। গত বছর অর্থ সংকটের কারণে নাসা প্রায় ৯০০ ডিইআই সংশ্লিষ্ট কর্মীর চাকরি বাতিল করেছিল। তখন নীলা ছিলেন সেই কয়েকজনের মধ্যে একজন যাঁরা চাকরি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এমনকি চলতি বছরের মার্চে নাসা যখন তাদের ডাইভার্সিটি বিভাগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়, তখনও তিনি নতুন পদবীতে চাকরি ধরে রেখেছিলেন।
গত ১০ মার্চ নাসা এক ই-মেইলে জানায়, নীলা রাজেন্দ্র নতুন গঠিত “অফিস অব টিম এক্সেলেন্স অ্যান্ড এমপ্লয়ি সাকসেস” বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই বিভাগটি জেপিএল-এর বিভিন্ন “আফিনিটি গ্রুপ” এবং উদ্যোগ, যেমন “ব্ল্যাক এক্সেলেন্স স্ট্র্যাটেজিক টিম” পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর নীলা তাঁর লিংকডইন প্রোফাইলে লিখেছিলেন, “এই অফিসের নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের সম্মিলিত সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার সক্ষমতা উন্মোচন করাই আমার লক্ষ্য।”
কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনার পর নাসার পক্ষে তাঁর পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। নীলার বরখাস্তের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ডিইআই কর্মসূচি নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই কর্মসূচিগুলো অপ্রয়োজনীয় এবং সরকারি সম্পদের অপচয়। অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ন করছে।
নীলা রাজেন্দ্রের বরখাস্তের খবর ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান সম্প্রদায়ের মধ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি নাসার মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করে সম্প্রদায়ের জন্য গর্বের প্রতীক ছিলেন। তাঁর বরখাস্তের ঘটনা অনেকের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
নীলার পেশাগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে না এলেও, তিনি জেপিএল-এ দীর্ঘদিন ধরে ডাইভার্সিটি এবং কর্মীদের কল্যাণে কাজ করে এসেছেন। তাঁর নেতৃত্বে জেপিএল-এর বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সহযোগিতা এবং অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁর সহকর্মীরা বলছেন, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ এবং দক্ষ নেতা ছিলেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব শুধু নাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিইআই কর্মসূচি বন্ধ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বরখাস্তের ঘটনা ঘটছে। এই নীতি দেশটির কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং ন্যায্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নীলা রাজেন্দ্রের বরখাস্তের পর তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে তাঁর সমর্থকরা বলছেন, তিনি তাঁর পেশাগত জীবনে নতুন পথ খুঁজে নেবেন। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক নীতির পরিবর্তনের একটি উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।
সূত্র: এনডিটিভি, ডেইলি মেইল