ইয়েমেনের হুথিদের ‘সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের’ হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, হুথিদের যেকোনো আক্রমণ ইরানের দ্বারা পরিচালিত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জন্য ইরানকে দায়ী করা হবে। ট্রাম্প স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “হুথিদের প্রতিটি গুলি ইরানের অস্ত্র ও নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হিসেবে গণ্য হবে, এবং ইরানকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে, যা হবে ভয়াবহ!”
এই হুঁশিয়ারির পরপরই, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে, এবং হুথিদের আক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, এই অভিযানের লক্ষ্য হুথিদের ক্ষমতা নির্মূল করা, তবে এটি কোনো সরকার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নয়।
হুথি বিদ্রোহীরা ইরানের সমর্থনপুষ্ট একটি গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তারা ইয়েমেনের বৃহত্তম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রায় এক দশক ধরে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বোমা হামলার পরও তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। হুথিরা লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক শিপিংয়ে হামলা চালিয়েছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে এই হামলার জন্য দায়ী করছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে মিত্র দেশগুলো সমর্থন জানিয়েছে। ব্রিটেনের সঙ্গে যৌথ অভিযানে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ড সমর্থন প্রদান করেছে। তবে, এই হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। হুথি-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত ৫৩ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচ শিশু ও দুই নারী রয়েছে, এবং ৯৮ জন আহত হয়েছে।
হুথি নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুমকি দিয়েছে যে, তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে। তাদের সামরিক মুখপাত্র জানায়, তারা ইতিমধ্যে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় হামলা চালিয়েছে।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা গাজার কেন্দ্রীয় অংশ ও রাফায় এলাকায় হামাসের সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থগিত রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি এবং সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই পরিস্থিতিতে সংযম প্রদর্শন করা এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগিয়ে আসা।