পাঠ্যবইতে উঠে এল জুলাই ‘শহীদদের বীরত্ব’, একই অধ্যায়ে মুজিব-জিয়া
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো এবার নতুন পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমে জোর দেওয়া হয়েছে ইতিহাসের নতুন মাত্রায়। এতে একই অধ্যায়ে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ এবং জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার উল্লেখ।
নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইগুলোতে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনের ঘটনাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই আন্দোলনে শহীদ হওয়া ছাত্র ও জনতার আত্মত্যাগের গাথা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের বইতে যুক্ত হয়েছে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শীর্ষক প্রবন্ধ। এতে মীর মুগ্ধ, গোলাম নাফিজ এবং আনাসসহ অনেক শহীদের আত্মত্যাগের কাহিনি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
নতুন বইগুলোতে ঐতিহাসিক দিক থেকেও বিশদ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ যেখানে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত প্রস্তুতির বার্তা বহন করে, সেখানে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার উল্লেখও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জিয়া প্রথমে নিজের পক্ষ থেকে এবং পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নাম যেমন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তেমনি মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে থাকা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর কথাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের মিত্র এবং বিরোধী শক্তির অবস্থানও তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূমিকা এবং স্বাধীনতার পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের সমর্থন উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চার হাজার সেনার আত্মত্যাগের ইতিহাসও স্থান পেয়েছে।
নতুন বইগুলোতে গ্রাফিতি এবং চিরন্তন বাণীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। পূর্ববর্তী বইয়ের শেখ হাসিনার বাণী এবং ছবি বাদ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের প্রতীকী উপস্থাপন যুক্ত করা হয়েছে।
বই প্রকাশের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে এবং দ্রুততার সঙ্গে তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
পরিবর্তিত পাঠ্যবইয়ের এই নতুন অধ্যায়গুলো একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানাতে ভূমিকা রাখবে, তেমনি দেশের ঐতিহাসিক আন্দোলন এবং আত্মত্যাগের গুরুত্ব বুঝতেও সাহায্য করবে।