শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৯:১৫

চট্টগ্রামে ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৮:২৯ অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ

চট্টগ্রামে ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির মধ্যে দিনভর সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকার আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের মধ্যে দিনভর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দফায় চলা এই সংঘর্ষে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত থাকলেও উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আকবরশাহ থানা ঘেরাও করেন, যা পরবর্তীতে আরেক দফা সংঘাতের কারণ হয়।

সংঘর্ষে আহতরা
সংঘর্ষে আহত চারজন হলেন: ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা মো. মারুফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মীর, একই সংগঠনের কর্মী মো. সজীব এবং ছাত্রদলের কর্মী রায়াদ হাসান। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের পটভূমি
সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে দুটি বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমত, কলেজের একজন নারী শিক্ষককে ক্লাসে আসতে মৌখিকভাবে নিষেধ করার অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি নেতা মনজুরুল আলম মঞ্জুর চাচা মাঈনু চৌধুরীকে প্রভাব খাটিয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনা। এই দুই ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন একজন নারী শিক্ষককে ক্লাসে না আসার নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এছাড়া, নতুন গঠিত কলেজ পরিচালনা কমিটিতে চারজন বিএনপি-সমর্থিত সদস্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রদল কলেজে নতুন কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করে। কলেজে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও এই কর্মসূচির প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় একজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দল কলেজে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।

থানা ঘেরাও ও দ্বিতীয় দফা সংঘাত
সন্ধ্যার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আকবরশাহ থানা ঘেরাও করেন। এ সময় ছাত্রদল ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীও থানার সামনে জড়ো হন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সদস্যকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মারধর করে গুরুতর আহত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ পরে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

দুই পক্ষের বক্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, “কলেজে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। তারপরও ছাত্রদল সংবর্ধনার আয়োজন করে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমরা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে সেখানেও আমাদের একজনকে মারধর করা হয়। এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আবার রাজপথে নামব।”

অন্যদিকে, ছাত্রদলের আকবরশাহ থানা শাখার সদস্য ফাহিম আহমেদ বলেন, “পরিচালনা কমিটির বিষয় নিয়ে নারী শিক্ষক সমন্বয়কদের ডেকে আনেন। আমরা সেখানে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর পানি ছুড়ে মারে। কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।”

আকবরশাহ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মাইনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষকদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার্থীরা বিরোধে জড়িয়েছে। এই বিষয়ে মীমাংসাও হয়েছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা যাওয়ার সময় ছাত্রদলের একজন কর্মীকে মারধর করে। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।”

পুলিশের বক্তব্য
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “কলেজ কমিটির একজন সদস্যকে নিয়ে একজন শিক্ষকের কটূক্তির কারণে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ছাত্রদলের একজনকে মারধর করে। এরপর ছাত্রদলের সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজনকে আক্রমণ করে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।”

সমাধানের উদ্যোগ
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আকবরশাহ থানায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এই বৈঠকে সেনাবাহিনী, বিএনপি, ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে সংঘর্ষের বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা হয় এবং পরিস্থিতি শান্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

প্রেক্ষাপট ও প্রভাব
এই সংঘর্ষ কলেজ প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ফলাফল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। কলেজে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও বিএনপি ও ছাত্রদলের সক্রিয়তা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদী ভূমিকা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তির একটি উদাহরণ।

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও সংঘর্ষ থামাতে বিলম্ব হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ প্রশাসন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
রোজায় সুস্থ থাকতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রোজায় সুস্থ থাকতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

এসিআইতে সেলস/মার্কেটিং অফিসার পদে নিয়োগ: আবেদন চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত

চোখের ক্লান্তি কমানোর সহজ উপায়

চোখের ক্লান্তি কমানোর সহজ উপায়

লিংকডইনে চাকরি খুঁজছেন? সতর্ক থাকুন, প্রতারকরা ফাঁদে ফেলছে

লিংকডইনে চাকরি খুঁজছেন? সতর্ক থাকুন, প্রতারকরা ফাঁদে ফেলছে

বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জিমি কার্টারের জীবনাবসান

বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জিমি কার্টারের জীবনাবসান

রাঘব তিওয়ারি

মুম্বাইয়ে টেলি অভিনেতা রাঘব তিওয়ারির ওপর হামলা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৃতির ভয়াল থাবা, তাণ্ডবের মাঝে লুটপাট, কারফিউ জারি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৃতির ভয়াল থাবা, তাণ্ডবের মাঝে লুটপাট, কারফিউ জারি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা, রেমিট্যান্স ও রফতানির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা, রেমিট্যান্স ও রফতানির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি

জিরো লাইনে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া, বিজিবির বাধা

জিরো লাইনে বিএসএফেরকাঁটাতারের বেড়া, বিজিবির বাধা

সুইডেনে স্কুলে গুলিবর্ষণে নিহত অন্তত ১০

সুইডেনে স্কুলে গুলিবর্ষণে নিহত অন্তত ১০