“বিএনপির পক্ষ নিচ্ছে প্রশাসন, এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়”—মার্কিন কূটনীতিকদের জানাল এনসিপি
গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে *মৌলিক সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত নয়—এই বার্তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল *জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বুধবার ঢাকায় সফররত মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বর্তমান প্রশাসনিক অবস্থা, নির্বাচনের রোডম্যাপ ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রেক্ষাপটে তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে।
প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট, মাঠে চাঁদাবাজি
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন এখনো *বিএনপির পক্ষে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এমনকি মাঠ পর্যায়ে *চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন তা রুখতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই ধরনের প্রশাসনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়।”
তাঁর ভাষায়, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য চাই নিরপেক্ষ প্রশাসন, পুলিশ এবং আমলাতন্ত্র—যা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানেই অর্থহীন
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা বলেছি—ন্যূনতম সংস্কার নয়, মৌলিক সংস্কার চাই। রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের যে তিনটি প্রধান দাবি আমরা উত্থাপন করেছি, সেটাই আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।”
এনসিপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রম, বিচারিক রোডম্যাপ, এবং ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর না করে শুধু সময় নির্ধারণ করে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অর্থহীন।
মার্কিন আগ্রহে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কাঠামো
মার্কিন কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছেন—সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক দলগুলোর গঠন প্রক্রিয়া, আদর্শ ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দৃশ্যপট কেমন হতে পারে। নাহিদ ইসলাম জানান, “আমরা আমাদের দলীয় আদর্শ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছি। মার্কিন প্রতিনিধিরা মূলত বিভিন্ন দলের মতামত শুনছেন।”
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগকে নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের দলের অবস্থান পরিষ্কার—বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত নয়।”
অর্থনীতি ও ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে আলোচনা
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈঠকে মার্কিন কূটনীতিকরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা ও ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিবেশ নিয়েও জানতে চেয়েছেন। এনসিপি বলেছে, ক্ষমতায় গেলে তারা কেমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, কীভাবে ব্যবসায়-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করবে—এসব বিষয়ও বৈঠকে তুলে ধরা হয়।
মার্কিন প্রতিনিধিদের অবস্থান
মার্কিন কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে আলোচনার সময় সরাসরি কোনো মন্তব্য করা হয়নি বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তাঁর ভাষায়, “তারা কারও বক্তব্যে মন্তব্য করছেন না। বরং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতেই এই আলোচনায় এসেছেন।”
প্রতিনিধি দলের পরিচয়
এদিন মার্কিন দূতাবাসের গুলশানের বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন—
- দলীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম,
- সদস্য সচিব আখতার হোসেন,
- সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন,
- সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব তাসনিম জারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই বার্তায় স্পষ্ট—বিচারহীনতা, চাঁদাবাজি ও প্রশাসনিক পক্ষপাতের মধ্যে *কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশজুড়ে *নিরপেক্ষতা ও মৌলিক সংস্কারের পরিবেশ তৈরি করেই কেবল একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপি কূটনীতিকদের কাছে এ বার্তাই তুলে ধরেছে।