শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১২

বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশের তালিকায় ভারত, শীর্ষে চীনসহ আরও যারা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:১৮ অপরাহ্ণ
বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশের তালিকায় ভারত, শীর্ষে চীনসহ আরও যারা

বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত দেশের তালিকায় ভারত, শীর্ষে চীনসহ আরও যারা

২০২৫ সালের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত বিষয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন দেশের নীতি ও আচরণ নিয়ে জনমতেও এসেছে পরিবর্তন। সম্প্রতি নিউজউইক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের গবেষণার ভিত্তিতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সমালোচিত বা ‘ঘৃণিত’ ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং জনমত জরিপের সমন্বয়ে তৈরি এই তালিকা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সরকারি নীতি ও আচরণের প্রতি ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

তালিকায় ভারত দশম স্থানে রয়েছে, যখন শীর্ষে অবস্থান করছে চীন। এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের সমালোচনার কারণ হিসেবে তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মানবাধিকার ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। নিউজউইকের বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানিয়েছে, এই তালিকা বিশ্বব্যাপী জনমতের একটি আয়না, যা দেশগুলোর নীতি ও কর্মকাণ্ডের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।

তালিকার শীর্ষে চীন

তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। প্রতিবেদন অনুসারে, চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, ব্যাপক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ, এবং পরিবেশ দূষণে দেশটির ভূমিকা বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে। এছাড়া হংকং, তাইওয়ান এবং ম্যাকাওয়ের স্বাধীনতার দাবির প্রতি চীনের কঠোর অবস্থান এবং উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেশটির প্রতি আন্তর্জাতিক অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলোও কিছু দেশে ঋণের ফাঁদ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা এই নেতিবাচক ধারণাকে আরও জোরদার করেছে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক প্রভাব, সামরিক হস্তক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদের কারণে যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশে সমালোচনার মুখে পড়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক উপস্থিতি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা রাশিয়ার প্রতি বিশ্বব্যাপী সমালোচনা বাড়িয়েছে। এছাড়া দেশটির তথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অভাবও সমালোচনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইলের অবস্থান

চতুর্থ স্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির বন্ধ দরজার নীতি, পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি এবং নাগরিকদের প্রতি কঠোর নিয়ন্ত্রণ বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ। উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বের অপ্রত্যাশিত আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো দেশটির প্রতি নেতিবাচক ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইসরাইল। গাজায় সাম্প্রতিক সংঘাত এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলে চলমান দখলদারিত্ব ইসরাইলের প্রতি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এবং মানবিক সংকটের জন্য ইসরাইলের নীতিগুলো বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়েছে।

তালিকার অন্যান্য দেশ

ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান, ইরান এবং ইরাক। পাকিস্তানের প্রতি সমালোচনার কারণ হিসেবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা উল্লেখ করা হয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রে, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ সমালোচনার মূল কারণ। ইরাকের ক্ষেত্রে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এই তালিকায় স্থান পাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

নবম স্থানে রয়েছে সিরিয়া। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ, মানবিক সংকট এবং সরকারের নিপীড়নমূলক নীতির কারণে সিরিয়া বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে।

ভারতের অবস্থান ও সমালোচনার কারণ

তালিকার দশম স্থানে রয়েছে ভারত। প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের প্রতি সমালোচনার কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি আচরণ এবং ইন্টারনেট সেন্সরশিপের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এছাড়া, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতি, বিশেষ করে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিষয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং কাশ্মীরের মতো অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে তীব্র করেছে। এছাড়া, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাবের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাও এই তালিকায় স্থান পাওয়ার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তালিকার তাৎপর্য ও প্রতিক্রিয়া

এই তালিকা প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে বিশ্বব্যাপী জনমতের একটি প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন, এই ধরনের তালিকা পক্ষপাতমূলক হতে পারে এবং জটিল ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে সরলীকরণ করতে পারে। তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে কেউ কেউ এই প্রতিবেদনকে ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে, আবার কেউ এটিকে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনার সুযোগ হিসেবে দেখছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের তালিকা জনমতের একটি আংশিক চিত্র তুলে ধরলেও এটি বিশ্বব্যাপী সম্পর্ক এবং কূটনীতির জটিলতাকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে না। তবে এটি নিঃসন্দেহে বিভিন্ন দেশের নীতি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে।

নিউজউইকের এই প্রতিবেদন বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির একটি আংশিক চিত্র তুলে ধরেছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া থেকে শুরু করে ভারতের মতো দেশগুলোর তালিকায় স্থান পাওয়া বিশ্বব্যাপী জনমতের বৈচিত্র্য এবং জটিলতাকে প্রকাশ করে। তবে এই তালিকা কেবল একটি দৃষ্টিভঙ্গি, এবং এটি বিশ্বের প্রতিটি দেশের ইতিবাচক অবদান বা সম্ভাবনাকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। এই ধরনের প্রতিবেদন দেশগুলোর জন্য তাদের নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে আরও সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক বিশ্ব গড়ে উঠতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি