অবশেষে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দিকে এগোচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাহী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় অবশেষে স্থায়ী ক্যাম্পাস পেতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সংশোধন ও পুনর্গঠনের ধাপে আটকে থাকা প্রকল্পটি এবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। এতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ম একনেক সভা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপার্সন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় ‘‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে এবং তা ২০২৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, শ্রেণিকক্ষ, অফিস ও আবাসনের তীব্র সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাই অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহায়ক সুবিধা বাড়াতে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রকল্পটি প্রথম প্রস্তাবিত হলেও বাজেট এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে একনেক থেকে ৮ বার ফেরত পাঠানো হয়। সবশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে ৫৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা করা হয়। পরিকল্পনা কমিশন সেখান থেকেও আরও ৮০ কোটি টাকা কমিয়ে ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্প চূড়ান্ত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে ২১ জানুয়ারি থেকে টানা আন্দোলনে নামে। তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এতে স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্র-জনতাও একাত্মতা প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পাশাপাশি আলটিমেটামও দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর এত বছরেও কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এই প্রকল্পের অনুমোদন আমাদের জন্য আনন্দের। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে।”
উল্লেখ্য, একনেক সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প ছাড়াও আরও সাতটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে, যেগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মকমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন, নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, লেক উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কন্টেইনার টার্মিনাল এবং সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো।