ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আম খাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বাজারে উঠেছে গ্রীষ্মের অমীয় স্বাদ—ফলের রাজা আম। এটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি প্রি-বায়োটিক, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই সহ ২০ ধরনের ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে আমের প্রাকৃতিক মিষ্টতা নিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে থাকে দুশ্চিন্তা—আসলে তাঁরা আম খেতে পারবেন কিনা।
এই বিষয়ে ফরাজি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা একেবারেই আম খেতে পারবেন না—এমন ধারণা সঠিক নয়। বরং শর্করাযুক্ত অন্যান্য খাবারের পরিমাণ কমিয়ে সামঞ্জস্য রেখে আম খাওয়া যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, সকালের নাশতায় যাঁরা তিনটি রুটি খান, তাঁরা একটি রুটি বাদ দিয়ে একটি আম খেতে পারেন। আবার যারা চিড়া খান, তাঁরা পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আম যুক্ত করতে পারেন।
রাতের খাবারে অনেকেই আম দিয়ে দুধ-ভাত খেতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে ভাতের পরিমাণ অর্ধেক কমিয়ে নেওয়া উচিত এবং এই খাবারটি সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করা ভালো। কারণ রাতে ক্যালোরি খরচের সুযোগ কম থাকে। অন্যদিকে, সকালে আম খেলে সারাদিনের কাজে সেই ক্যালোরি খরচ হয়ে যায়। পাকা আম খাওয়ার পর অন্তত ১ ঘণ্টা হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একজন ডায়াবেটিস রোগী প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০–৬০ গ্রাম আম খেতে পারেন, অর্থাৎ একটি ছোট আম বা অর্ধেক মাঝারি আম।
বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল ও ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ডায়াটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কনসালটেন্ট ফাতেমা সিদ্দিকী ছন্দা জানান, আম লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সম্পন্ন একটি ফল, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ স্ন্যাকস হতে পারে। এতে থাকা আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আমে থাকা ভিটামিন এ এবং সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আর পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
তবে ছন্দা সতর্ক করে বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে একটির বেশি আম না খাওয়াই ভালো। কারণ আমের মিষ্টি উপাদান রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আম খাওয়ার পর ব্লাড সুগার বেড়ে যাচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।
সুতরাং, ডায়াবেটিস থাকলেও নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ও সময় জেনে আম খাওয়া যেতে পারে—বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।