ওয়াকফ বিল বিরোধী আন্দোলনে মুর্শিদাবাদে তিনজন নিহত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই বিল পাস করার পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের এই আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। মুর্শিদাবাদে শুক্রবার (১১ এপ্রিল, ২০২৫) বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা শনিবার স্থানীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জাওয়েদ শামীম জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় দুজন বিক্ষোভকারী মারা যান, এবং আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় কলকাতা হাইকোর্ট জঙ্গিপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে, ত্রিপুরার উনাকোতি জেলায় শনিবার একই ইস্যুতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ১৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই বিলের বিরোধিতা করে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইন কার্যকর হবে না। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, “আমরা এই আইন সমর্থন করি না। পশ্চিমবঙ্গে এটি বাস্তবায়ন হবে না। তাহলে এই সংঘর্ষ কেন? আমি সবাইকে শান্ত থাকার এবং আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
মুর্শিদাবাদ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মালদা, উত্তর ২৪ পরগণা এবং হুগলিতে শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িসহ একাধিক যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং সরাসরি গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো ওয়াকফ বিল নিয়ে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভের তীব্রতা প্রকাশ করছে।
ওয়াকফ বিলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের দানকৃত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধান আরোপ করে। সমালোচকদের মতে, এটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। বিরোধীরা বলছেন, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তি অধিগ্রহণের পথ সুগম করতে পারে, যা ব্যাপক অসন্তোষের কারণ হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার এই বিল প্রত্যাখ্যান করলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান এবং আইনটির বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পশ্চিমবঙ্গে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে, এই আন্দোলন কোন পথে এগোবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
সূত্র: এনডিটিভি