বৃহস্পতিবার, ৫ই জুন, ২০২৫| বিকাল ৪:২৩

বাংলাদেশি নারীদের চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে চীনা দূতাবাসের সতর্কতা, পেছনে ভয়াবহ চিত্র

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ২৭, ২০২৫ ৮:২৪ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশি নারীদের চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে চীনা দূতাবাসের সতর্কতা, পেছনে ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশি নারীদের চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে চীনা দূতাবাসের সতর্কতা, পেছনে ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস সম্প্রতি দেশটিতে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কতা জারি করেছে, যাতে তারা বাংলাদেশি নারীদের সঙ্গে বিয়ে না করেন। গত রোববার (২৫ মে) দেওয়া এক ঘোষণায় দূতাবাস জানায়, এমন বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং এধরনের বিয়েকে ‘বিদেশি বউ কেনা’র মতো বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রথম দর্শনে বিষয়টি হাস্যরসাত্মক মনে হলেও এর অন্তরালে রয়েছে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক বাস্তবতা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে গত মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের অবিবাহিত পুরুষদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপালসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নারীদের বিয়ে করছে। মূলত চীনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পুরুষরাই বেশি এই বিয়েতে জড়াচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে চীনের দীর্ঘমেয়াদি লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা। ১৯৮০ সালের পরবর্তী সময়ে চীনে ব্যাপকহারে কন্যাশিশুদের গর্ভেই নষ্ট করে ফেলা হতো, যার ফলে এখন অনেক অঞ্চলে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি। বর্তমানে সেই সময় জন্ম নেওয়া প্রজন্ম বিয়ের বয়সে পৌঁছেছে, কিন্তু নারীর সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই বিয়ে করতে পারছে না।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনের প্রায় পাঁচ কোটি পুরুষ কখনোই বিয়ে করতে পারবে না। পরিস্থিতি এতটাই সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে যে, দেশটিতে নারীদের বিয়ের বয়স কমানোর দাবি উঠেছে যেন বিয়ের উপযোগী নারীর সংখ্যা বাড়ানো যায়।

এই সংকট দূর করতে চীনের কিছু অঞ্চল বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারী পাচারের মাধ্যমে বিদেশি নারী ‘ক্রয়’-এর ঘটনা বেড়ে গেছে। লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিং গাও বলেন, এই চাহিদার জেরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে শিশু ও মেয়েদের চীনে পাচার করে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পাচারে বাংলাদেশ ও নেপাল অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। দারিদ্র্যপীড়িত ও গ্রামীণ এলাকার মেয়েদের পাচারকারীরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলছে।

চীনে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম হওয়ায়, দালাল চক্র বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নারীদের উন্নত জীবন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীনে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পরই তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং চলাফেরায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর এসব নারীদের ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চীনের অবিবাহিত কৃষক ও শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই ‘বিক্রি’কে বিয়ের আড়ালে চালানো হলেও বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিয়েতে নারীদের সম্মতি থাকে না। চীনে পৌঁছে অনেককে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় এবং দ্রুত সন্তান নেওয়ার জন্য চাপও দেওয়া হয়।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৯ সালে জানায়, মিয়ানমারের নারীরা অনেক দিন ধরেই এমন পাচারের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ও নেপালও এই ভয়ঙ্কর চক্রের আওতায় চলে এসেছে। পাচার হওয়া নারীরা চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষক বা নিম্নআয়ের শ্রমিকদের কাছে ‘ভিনদেশি বউ’ হিসেবে বিক্রি হন। কেউ এই পরিস্থিতি থেকে পালাতে চাইলেও, অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে চীনের আইনের অধীনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হন।

এই ভয়াবহ বাস্তবতায় চীনা দূতাবাসের এই সতর্কতা কেবল বিবাহ নিয়ে নয়, বরং একটি সুদূরপ্রসারী মানবাধিকার সংকটেরই প্রতিফলন বলে বিবেচিত হচ্ছে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি