বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ১০:৫৭

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বাংলাদেশের থেকেও খারাপ: শুভেন্দু অধিকারী

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৩, ২০২৫ ৬:৫৩ অপরাহ্ণ
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বাংলাদেশের থেকেও খারাপ: শুভেন্দু অধিকারী

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বাংলাদেশের থেকেও খারাপ: শুভেন্দু অধিকারী

ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ‘ওয়াকফ সংশোধনী আইন, ২০২৫’-এর জেরে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সৃষ্ট ব্যাপক অশান্তি ও বিক্ষোভের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা ও বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি করেছেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বাংলাদেশের তুলনায়ও খারাপ।

কলকাতায় বিজেপির এক কর্মসূচিতে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এখন বাংলাদেশের চেয়েও ভয়াবহ। মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুর্গা মণ্ডপ ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। হিন্দুদের বাড়ি ও দোকানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সামসেরগঞ্জের ডাকবাংলো মোড় ও কাঞ্চনতলায় প্রায় ৩০টি হিন্দু দোকান তছনছ করা হয়েছে। কড়েয়া থানা এলাকায় জলযাত্রীদের ওপর হামলা হয়েছে। চাঁপদানিতে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে হিন্দু পতাকা নামানোর ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ধূলিয়ান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে একটি মন্দিরও ভাঙচুর করা হয়েছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালে ঔরঙ্গাবাদ, উমরপুর ও নিমতিতায় ৬৮টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলো রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্দিষ্টভাবে হামলার ইঙ্গিত দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি ও সামসেরগঞ্জের মতো এলাকাগুলোতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। অপরদিকে, পুলিশের দাবি, বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও বোমা নিক্ষেপ করা হলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে মুর্শিদাবাদ পুলিশ।

শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “মুখ্যসচিব ও জেলাশাসককে বারবার বলেছি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহযোগিতা নিন। মোথাবাড়িতে ৮৬ জন নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সামসেরগঞ্জ ও ধূলিয়ানে যা ঘটেছে তা বর্বরোচিত। রাজীব কুমারের তৈরি একটি ফরমুলা আছে—প্রথমে হামলা হবে, তারপর ফোন ও ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে, জেলাশাসকের তরফে ১৪৪ ধারা জারি হবে এবং সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনামলে হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই শাসনে হিন্দু পতাকা ও মন্দিরকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। আমি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। নিজেদের সুরক্ষিত রাখুন। যে ভাঙচুর হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আমরা করব।”

ওয়াকফ সংশোধনী আইন কী বলছে?

ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও মুসলিম সম্প্রদায়ের দান করা হাজার হাজার একর জমি রয়েছে। এই সম্পত্তিগুলোর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ওয়াকফ বোর্ড। কিছু সম্পত্তি অব্যবহৃত পড়ে থাকলেও কিছু অন্যদের দখলে চলে গেছে। ইসলামিক রীতি অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে দান করা ধর্মীয় সম্পদ, যা বিক্রি বা অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় না।

ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৮,৭২,৩৫১টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার মোট আয়তন ৯,৪০,০০০ একর। এই সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ১.২০ লাখ কোটি রুপি। নতুন সংশোধনী আইনে ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন, অমুসলিমদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং কোন সম্পত্তি ওয়াকফ হবে তা সরকারের নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়ার প্রস্তাব ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত বৃহস্পতিবার লোকসভায় স্পষ্ট করেছেন, সংশোধিত বিলে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার কোনো বিধান নেই। তিনি বলেন, “একজন মুসলিম চ্যারিটি কমিশনার হতে পারেন। তাকে শুধু আইন অনুযায়ী ট্রাস্ট পরিচালনার বিষয়টি দেখতে হবে। এটা ধর্মীয় কাজ নয়, প্রশাসনিক কাজ। আমি মুসলিম সম্প্রদায়কে স্পষ্টভাবে বলছি, আপনাদের ওয়াকফ বোর্ডে কোনো অমুসলিম থাকবে না।”

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি