গাজায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ হবে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) এই বৈঠকে তারা গাজার চলমান যুদ্ধ, ইসরায়েলের ওপর শুল্ক, আর ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকের পর দুই নেতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এবং গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বড় আশার বার্তা দেন।
বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি নতুন চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, এটি সফল হবে এবং সব জিম্মি ফিরে আসবে।” তবে ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি এটিকে সমাধানের একটি পথ হিসেবে দেখছেন। নেতানিয়াহু, যিনি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে, এই বৈঠকে ট্রাম্পের সমর্থন পেয়েছেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ হবে। আমি চাই এই যুদ্ধ শিগগির শেষ হোক। আমার বিশ্বাস, একটি পর্যায়ে গিয়ে এই সংঘাত থামবে, আর সেটা বেশি দেরি হবে না।” তিনি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি তুলে বলেন, “এখন জিম্মিদের নিয়ে আমাদের সমস্যা আছে। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া, কিন্তু এত দীর্ঘ হওয়ার কথা নয়। আমরা এটাকে ত্বরান্বিত করতে চাই।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ জিম্মিদের মুক্তি চায়। তারা আর কিছুর চেয়ে এটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নেতানিয়াহু আমাদের সঙ্গে এই লক্ষ্যে কাজ করছেন। আমরা আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই প্রচেষ্টা সফল হলে গাজায় শান্তি ফিরবে।
কিন্তু ইসরায়েলের ভেতরে নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। অনেক ইসরায়েলি মনে করেন, নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। একজন ইসরায়েলি নাগরিক বলেন, “আমরা আমাদের প্রিয়জনদের ফিরে চাই। কিন্তু নেতানিয়াহু শুধু নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে চান।” ট্রাম্প যদিও নেতানিয়াহুর পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু চেষ্টা করছেন। তিনি জিম্মিদের জন্য কাজ করছেন। আমরা একসঙ্গে এটার সমাধান খুঁজছি।”
গাজার যুদ্ধ গত ১৮ মাস ধরে চলছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ শুরু করে। এতে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল, যাদের অনেকেই এখনো মুক্ত হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু মার্চে তা ভেঙে যায়। এরপর থেকে হামলা আবার তীব্র হয়েছে।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য গাজার মানুষের জন্য আশার আলো জাগিয়েছে। একজন ফিলিস্তিনি বলেন, “আমরা শান্তি চাই। যুদ্ধে আমরা সব হারিয়েছি।” তবে ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে বলছেন, “এটা আমাদের জমি। আমরা কেন চলে যাব?”
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “আমরা হামাসকে শেষ করতে চাই। জিম্মিদের মুক্তি আমাদের লক্ষ্য।” কিন্তু তার এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত। গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ট্রাম্পের কথায় আশা জাগলেও বাস্তবে যুদ্ধ বন্ধ কতটা দ্রুত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, “এটা দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। আমরা দ্রুত সমাধান চাই।” ইসরায়েলি জনগণও বলছে, “আমরা আর যুদ্ধ চাই না। আমাদের জিম্মিরা ফিরে আসুক।”