ফিলিস্তিনি সংকটের সমাধান ছাড়া শান্তি অসম্ভব: সিসি
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে এবং খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার কায়রোতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন। গাজার চলমান সংকট নিয়ে দুই নেতার এই বৈঠক আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিসি বলেন, “গাজায় হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দরকার। আমরা এই বিষয়ে একমত। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমি থেকে জোর করে সরানোর যে কোনো প্রস্তাব আমরা মেনে নেব না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যতক্ষণ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হবে, ততক্ষণ টেকসই শান্তি সম্ভব নয়। এই সংকট বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত করছে।”
সিসি আরও জানান, গাজা পুনর্নির্মাণের জন্য মিসরে একটি সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “গাজার মানুষ যুদ্ধের ভয়াবহতায় ভুগছে। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।” গাজায় খাদ্য আর ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। স্থানীয় একজন বলেন, “আমাদের বাচ্চারা না খেয়ে আছে। বিশ্ব কি আমাদের ভুলে গেছে?”
অন্যদিকে, ম্যাক্রোঁ গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা হামাস বা ইসরায়েলের কেউই শাসন করবে না।” তিনি ইসরায়েলের চলমান হামলা ও যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের নিন্দা জানান। ম্যাক্রোঁ বলেন, “আমরা জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চাই। গাজা বা পশ্চিম তীর থেকে মানুষকে জোর করে সরানো এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়াই।”
ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটা ইসরায়েলসহ পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।” তিনি গত ৪ মার্চ আরব দেশগুলোর দেওয়া গাজা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “এটি গাজার জন্য বাস্তবসম্মত সহায়তা। এটি একটি নতুন প্রশাসন গঠনের পথ খুলবে। গাজার শাসনে হামাস বা ইসরায়েল থাকবে না।”
গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলা চলছে। হামাসের আক্রমণের জবাবে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি হলেও মার্চে তা ভেঙে যায়। সিসি বলেন, “এই যুদ্ধ আর চলতে পারে না। মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে।”
ম্যাক্রোঁর এই মন্তব্যে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, “আমরা একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন চাই, যেটি গাজার মানুষের জন্য কাজ করবে।” ফিলিস্তিনিরা বলছেন, “আমরা আমাদের জমিতে থাকতে চাই। কিন্তু শান্তি কবে আসবে?”
সিসির আহ্বানে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি সংকটের সমাধান ছাড়া শান্তি দূরের স্বপ্ন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিলিস্তিনিদের ন্যায়বিচারের ওপর নির্ভর করে।” মিসর দীর্ঘদিন ধরে গাজার জন্য মধ্যস্থতা করে আসছে। একজন মিসরীয় বলেন, “আমরা আমাদের ভাইদের জন্য লড়ছি।”
ম্যাক্রোঁর প্রস্তাবে আরব দেশগুলোর পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন গাজার জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের একটি সমাধান দরকার, যেটি সবাই মেনে নেবে।” গাজার একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা শুধু বাঁচতে চাই। যুদ্ধ আর না।”
দুই নেতার এই বৈঠক গাজার সংকট সমাধানে নতুন পথ খুলতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সিসি আর ম্যাক্রোঁর বার্তা স্পষ্ট—ফিলিস্তিনি সংকট না মিটলে শান্তি আসবে না। বিশ্ব এখন তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে। (সূত্র: আল জাজিরা)