গাজা-মিশর সীমান্ত থেকে সেনা সরাবে না ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গাজা-মিশর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএন-কে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যুদ্ধবিরতির আলোচনার অংশ হিসেবে ইসরায়েল প্রতিনিধি দল পাঠালেও তারা সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার ব্যাপারে অনড় অবস্থান বজায় রেখেছে।
ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সরব না। আমরা হামাস সন্ত্রাসীদেরকে আবার ট্রাক, রাইফেল নিয়ে আমাদের সীমান্তে চলাচল করতে দেবো না। আমরা তাদেরকে আবার চোরাচালানের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হতে দেব না।”
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে এবং হামাসের শেষ দফার জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েল এ ঘোষণা দিল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপের শেষ দিনে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ইসরায়েল এতে সম্মত না হওয়ায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আবার হুমকির মুখে পড়েছে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা-মিশর সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি সেনা সরানো না হলে তা যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হবে এবং চুক্তি ব্যাহত করার অজুহাত তৈরি করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হবে। হামাসের দাবি, চুক্তির প্রথম ধাপের শর্ত অনুসারে ৪২তম দিনে, অর্থাৎ শনিবার থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়ে ৯ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিশরের রাজধানী কায়রোয় একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন। তবে এই আলোচনা দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে এটি কেবল প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনাও হতে পারে।
এরই মধ্যে হামাসের হাতে আটক ৩৮ জন জিম্মি এবং ইসরায়েলের হাতে বন্দি হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তির প্রথম ধাপের সময়সীমা শনিবার শেষ হচ্ছে। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কেবল প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে আরও জিম্মি মুক্ত করতে চান, তবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা তার নেই। সরকার চুক্তির প্রথম ধাপটি যতটা সম্ভব দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে।
গত মে মাসে ইসরায়েল মিশর সীমান্ত সংলগ্ন ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হামাসকে দুর্বল করার লক্ষ্যে তারা সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন রেখেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে হামাস চূড়ান্ত চারজন মৃত জিম্মিকে হস্তান্তর করার পর তারা দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু এবং তার সরকার যদি চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টা করে তবে তা জিম্মি ও তাদের পরিবারের জন্য আরও দুর্ভোগ বয়ে আনবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ইসরায়েল যদি সেনা প্রত্যাহারে রাজি না হয়, তাহলে হামাসও নতুন চুক্তিতে রাজি হবে না। দুই পক্ষের এই অনড় অবস্থান আগামী দিনগুলোতে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি করেছে।