ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় গঠনমূলক সম্পর্ক নষ্ট করে এমন বক্তব্য এড়িয়ে চলার আহ্বান মোদির
ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে মোদি ড. ইউনূসের প্রতি দুই দেশের গঠনমূলক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন বক্তব্য এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলা এই আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
নয়াদিল্লিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এই বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত দুই দেশের সম্পর্কে জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভরসা করে।” মিশ্রি আরও জানান, মোদি দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ইতিহাস তুলে ধরেন, যা উভয় দেশের মানুষের জন্য বাস্তব সুবিধা এনেছে।
বৈঠকে মোদি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। মিশ্রি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে এমন যেকোনো বক্তব্য থেকে দূরে থাকা উচিত।” এই আহ্বানের মাধ্যমে তিনি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
বৈঠকে মোদি সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং তাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনের ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবে।”
বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে মোদি বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নেতৃত্বে এই ফোরাম আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে।” এটি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি আনতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। মোদির আহ্বান স্পষ্ট, তিনি সম্পর্কের মধ্যে কোনো তিক্ততা চান না। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। সীমান্ত ও সংখ্যালঘু ইস্যুতে মোদির উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে ড. ইউনূস কী জবাব দিয়েছেন, তা এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে এই আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করার পথে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
বিমসটেকের মঞ্চে এই বৈঠক শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্যই নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।