শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১১

ওয়াকফ আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলো ভারত সরকার

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৮:২১ অপরাহ্ণ
ওয়াকফ আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলো ভারত সরকার

ওয়াকফ আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলো ভারত সরকার

ভারত সরকার বিতর্কিত মুসলিম ওয়াকফ আইন কার্যকরের সময় পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আইনের বিরুদ্ধে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির সময় কেন্দ্রীয় সরকার আদালতকে জানায়, পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তারা নতুন আইনের অধীনে কোনো ‘ওয়াকফ নিয়োগ’ করবে না, ওয়াকফ বোর্ডের দাবিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ নীতিতেও কোনো পরিবর্তন করবে না।

‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এমন একটি ধারা, যার মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ড কোনো কাগজপত্র ছাড়াই মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারে। এই ধারাটি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

### আইনটির পটভূমি ও বিতর্ক
চলতি মাসের শুরুতে ভারতের সংসদে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাস হয়। এই আইনে বলা হয়, ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডে ২২ জন সদস্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ জন এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে ১১ জন সদস্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ জন মুসলিম সদস্য থাকতে পারবেন। এই বিধানের ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হয়।

বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় তিনজন নিহত হন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনটি কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করেছিল। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকা হয়।

### সুপ্রিম কোর্টে শুনানি
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি আদালতকে জানান, সরকার ওয়াকফ আইনের ধারা ৯ এবং ১৪-এর অধীনে কোনো নতুন নিয়োগ বা পরিবর্তন করবে না। এর মাধ্যমে অমুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে স্থান দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হবে। তিনি আইনটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে সাত দিনের সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে।

শুনানির সময় ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জিব খান্না এই আইন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি সরকারের প্রতিনিধির কাছে প্রশ্ন করেন, “ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের স্থান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, কিন্তু সরকার কি হিন্দু এন্ডোমেন্ট বোর্ডে মুসলিম সদস্যদের স্থান দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে?” এই প্রশ্ন আইনটির নিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় সমতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

### পিটিশন ও আদালতের অবস্থান
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওয়াকফ আইন নিয়ে তাদের কাছে অসংখ্য পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। তবে, এত বিপুল সংখ্যক পিটিশন নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা চার থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পিটিশন নিয়ে কাজ করবে এবং এগুলোর ওপর ভিত্তি করে রায় দেবে। এই পিটিশনগুলোতে আইনটির বিভিন্ন ধারা, বিশেষ করে অমুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ নীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

### সমাজে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্ক ভারতের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ এই আইনকে তাদের ধর্মীয় অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে, ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে, সরকারের সমর্থকরা দাবি করছেন, এই আইন ওয়াকফ বোর্ডের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে।

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভে নিহতদের ঘটনা এই আইনের বিরুদ্ধে জনরোষের তীব্রতা প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত এবং সুপ্রিম কোর্টের শুনানি আইনটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

### পরবর্তী পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে সাত দিনের মধ্যে ওয়াকফ আইন নিয়ে উত্থাপিত চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে বলেছে। এই সময়ের মধ্যে আইনটির কোনো ধারা কার্যকর করা হবে না। আদালতের পরবর্তী শুনানিতে পিটিশনগুলোর ওপর বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং আইনটির বৈধতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন নিয়ে সরকার এবং আদালতের পদক্ষেপ ভারতের ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সম্পর্ক এবং সামাজিক সমতার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।

সূত্র: এনডিটিভি

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি