বাংলাদেশের হারানো ইতিহাস: চট্টগ্রামের কাপ্তাই লেকের রহস্যময় জীবন
চট্টগ্রামের কাপ্তাই লেক, এক সময়ের প্রাণবন্ত অঞ্চলের চিত্র আজ অনেকটাই বদলে গেছে। এই লেকের ইতিহাস শুধুমাত্র একটি জলাশয় কিংবা একটি দর্শনীয় স্থান নয়, বরং এটি একটি পরিণত ইতিহাসের অংশ, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের পটভূমি ফুটে উঠেছে। কাপ্তাই লেক, যা তৈরি হয়েছিল ১৯৬০ সালের দশকে, একটি বৃহত্তম জলাধার এবং কৃত্রিম হ্রদ, যা আজও দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাপ্তাই লেকের গল্প শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে, যখন তৎকালীন সরকার রাঙ্গামাটি অঞ্চলের পানি সংকট মোকাবেলা করতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে কাপ্তাই নদী বাঁধ নির্মাণ করেছিল। সেই সময়ে, এই নদীটি একে অপরকে সংযুক্ত করা শত শত গ্রাম এবং ছোট ছোট দ্বীপের সঙ্গী ছিল। কিন্তু, জলাধার নির্মাণের ফলে বহু গ্রাম ও বাসিন্দাদের জীবনের চিত্র সম্পূর্ণরূপে পালটে যায়। বহু মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এবং তাদের জন্য নতুন বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর ফলে কাপ্তাই লেক আজ শুধুমাত্র একটি জলাশয় নয়, বরং একটি হারানো সমাজ এবং হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেকের জলে ভেসে ওঠা কিছু গ্রাম আজও প্রমাণ করে যে, এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। স্থানীয়রা যারা এই লেকের আশেপাশে বাস করতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও সেই পুরনো জীবনযাত্রার গল্পগুলো বলেই থাকেন। তারা বলেন, “আমরা যেভাবে আগে বাস করতাম, তা আজ কল্পনাও করা যায় না।” এখানে থাকা প্রাচীন গ্রামগুলো, সেই সময়ের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি, সেই সকল দিনগুলোর স্মৃতি আজও কিছু মানুষের স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে আছে।
কাপ্তাই লেকের দৃশ্যপট আজও অনেককে মুগ্ধ করে। লেকের সচ্ছ জল, আশেপাশের পাহাড়, গ্রাম্য জীবনের নিস্তব্ধতা—এটি এক গভীর শান্তির স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা এই জায়গাটি এখন পর্যটকদের জন্য এক অমূল্য রত্ন হিসাবে উপস্থাপন করে থাকে। পর্যটকেরা এখানে আসেন মাছ ধরার জন্য, নৌকা ভ্রমণের জন্য অথবা কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
কিন্তু এর ইতিহাস এবং বর্তমানের মধ্যে যে সংযোগ রয়েছে, তা কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে একটি গভীর প্রতিচ্ছবি তৈরি করে। কাপ্তাই লেকের জল যেন সেই সময়ের স্মৃতিগুলোকেই ধারণ করে রাখে—এক এমন ইতিহাস যা একদিকে গর্বের, অন্যদিকে বেদনার। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক নিদর্শন নয়, বরং মানুষের সংগ্রাম, পরিবর্তন এবং ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীকও হয়ে দাঁড়িয়েছে।