ভূমিকম্পের পর মিয়ানমার জান্তার ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি
মিয়ানমারের জান্তা সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বুধবার, ২ এপ্রিল, এবং চলবে আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভি এই খবর নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সও এই ঘোষণার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এমআরটিভির একটি বুলেটিনে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধবিরতির মূল কারণ হলো সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প। গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর ৬.৪ মাত্রার একটি পরাঘাত পরিস্থিতিকে আরও ভয়ংকর করে তোলে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বহু ভবন, সেতু ধ্বংস হয়ে গেছে, আর সড়ক-মহাসড়কে ফাটল ধরেছে। জান্তা সরকার বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য এই সাময়িক শান্তি জরুরি।
এই ঘোষণার পর সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই সময়ে বিদ্রোহীরা যদি হামলা চালায় বা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।” এটি স্পষ্ট যে, জান্তা এই যুদ্ধবিরতিকে কঠোরভাবে মানতে বদ্ধপরিকর।
ভূমিকম্পটি মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। মান্দালয়, সাগাইং, নেপিডোসহ অনেক এলাকায় হাজার হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। উদ্ধারকারী দলগুলো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও জীবিত মানুষ উদ্ধার হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা মরদেহ বের করে আনছে। এমআরটিভি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩,৩০০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, আর আহত হয়েছেন ৪,৫০০-এর বেশি। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। জাতিসংঘের হিসেবে, এই সংঘাতে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় দুই কোটি মানুষ এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ভূমিকম্প এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। মানুষের জীবন বাঁচাতে ত্রাণ পৌঁছানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে, একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। ১ এপ্রিল চীনা রেড ক্রসের একটি ত্রাণ বহরে গুলি চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এই বহরটি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে যাচ্ছিল। সেনার দাবি, ত্রাণ বহরের চলাচলের কোনো পূর্ব তথ্য ছিল না, তাই নিরাপত্তার কারণে গুলি চালানো হয়। ঘটনাটি শান রাজ্যের নওংখিও টাউনশিপের কাছে ঘটেছে, যেখানে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে।