যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ৪
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আবারও উত্তেজনার আগুন ছড়িয়েছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়া এলাকায় এক নারীসহ চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই হামলায় আরও সাতজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ’র মধ্যে গত নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু এই হামলা সেই ভঙ্গুর শান্তি চুক্তিকে আরও চাপের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বৈরুতের দাহিয়া এলাকা হিজবুল্লাহ’র একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এটি দ্বিতীয়বার ইসরায়েলের হামলার শিকার হলো। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যরাতে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এই হামলা চালানো হয়। হামলায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ওপরের তিনটি তলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে ধ্বংসস্তূপ আর ধোঁয়ার মধ্যে আতঙ্কিত মানুষের ছুটোছুটি দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এটি ছিল একটি লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান। তারা হিজবুল্লাহ’র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হাসান আলি মাহমুদ বদেইরকে নিশানা করেছিল। ইসরায়েলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বদেইর ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার পরিকল্পনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিক হুমকি সৃষ্টি করেছিলেন, তাই তাকে নির্মূল করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এখন সেই হুমকি দূর হয়েছে।” তবে এই হামলা নিয়ে হিজবুল্লাহ’র পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।
লেবাননের শীর্ষ নেতৃত্ব এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন হামলার নিন্দা করে বলেছেন, এটি দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম আরও এক ধাপ এগিয়ে এটিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘নির্লজ্জ লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই হামলা শান্তি প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার একটি স্পষ্ট প্রমাণ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর জবাবদিহি দাবি করছি।”
গত নভেম্বরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ’র মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমে এসেছিল। কিন্তু এই হামলা সেই স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দাহিয়া এলাকায় এর আগেও ইসরায়েলি হামলা হয়েছে, যেখানে হিজবুল্লাহ’র শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। এই গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট এই সংগঠনটি লেবাননের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই হামলার পর বৈরুতের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মধ্যরাতের বিস্ফোরণে অনেকে ঘুম থেকে জেগে উঠে রাস্তায় ছুটে এসেছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ চলছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ’র মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আগুন জ্বালাতে পারে।