শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১২

যুদ্ধবিরতির জন্য ‘নমনীয়’ হয়েছে ইসরায়েল

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৩, ২০২৫ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ
যুদ্ধবিরতির জন্য ‘নমনীয়’ হয়েছে ইসরায়েল

যুদ্ধবিরতির জন্য ‘নমনীয়’ হয়েছে ইসরায়েল

গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েল তার কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এই বছরের ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু ১৮ মার্চ ইসরায়েল এই চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে, যা পবিত্র রমজান মাসেও অব্যাহত ছিল।

এরপর থেকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ইসরায়েল দাবি করেছিল, যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসকে তাদের হাতে আটক ১১ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। বিপরীতে হামাস জানায়, তারা সর্বোচ্চ পাঁচ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। এই ইস্যুতে দুই পক্ষই প্রথমে কোনো ছাড় দিতে রাজি ছিল না।

মিসর এই সমস্যার সমাধানে একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবে বলা হয়, ৪৫ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যার সময় হামাস আট জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রাথমিকভাবে এই প্রস্তাবে সম্মত হননি।

কিন্তু গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর নেতানিয়াহু কিছুটা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল মিসরের কাছে তাদের পাল্টা প্রস্তাব পাঠায়, যেখানে তারা জীবিত জিম্মির সংখ্যা ১১ থেকে কমিয়ে এনেছে। তবে তারা দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে এই জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যদিকে, হামাস বলছে, তারা জিম্মিদের ধাপে ধাপে মুক্তি দেবে এবং ১৬ জন মৃত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে।

ইসরায়েল তাদের প্রস্তাবে আরও বলেছে, জিম্মিদের বিনিময়ে তারা তুলনামূলক কম সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, তারা একজন জিম্মির বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে চায়। এছাড়া, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে ইসরায়েল গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেবে, মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেবে এবং ১৮ মার্চের আগে তাদের সেনারা যে অবস্থানে ছিল, সেখানে ফিরে যাবে। এর মানে হলো, গাজার মধ্যবর্তী এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাবে।

ইসরায়েলের প্রস্তাবে আরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় হামাসের সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। হামাস শুরু থেকেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে। এর আগে জানুয়ারির চুক্তিতেও বলা হয়েছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির সময় স্থায়ী সমাধানের আলোচনা হবে। কিন্তু ইসরায়েল সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে ১৮ মার্চ থেকে রমজান মাসে ব্যাপক হামলা শুরু করে। শুধুমাত্র ওই দিনই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়।

পূর্বের এই বিশ্বাসভঙ্গের কারণে হামাস এখন ইসরায়েলের মৌখিক বা লিখিত প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করতে চায় না। এ বিষয়ে হামাসের অবস্থান মধ্যস্থতাকারী আরব দেশগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকোফকে জানানো হয়েছে। উইটকোফ বলেছেন, প্রয়োজনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা দেবেন যে ইসরায়েল স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খলিল আল-হায়া তার প্রতিনিধি দল নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যাবেন। মিসর ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবটি তাদের কাছে পৌঁছে দেবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হামাস হয়তো ইসরায়েলের বেশিরভাগ দাবি মেনে নেবে না। ফলে খুব শিগগির যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এর আগে জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল এটির মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু হামাস জানিয়েছিল, চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে যেতে হবে। এই ধাপে গেলে তারা আরও জিম্মি মুক্তি দেবে। কিন্তু ইসরায়েল তা না মেনে চুক্তি ভঙ্গ করে হামলা শুরু করে। এমনকি হামাস প্রস্তাব দিয়েছিল, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হলে তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দেবে। কিন্তু নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, এতে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে, যা তারা মেনে নেবে না।

গাজার এই সংকট সমাধানে নতুন যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং জটিল দাবি-দাওয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি