দক্ষিণ চীন সাগরে নতুন তেলের খনি আবিষ্কার চীনের, মজুত বিপুল
দক্ষিণ চীন সাগরে একটি নতুন তেলের খনি আবিষ্কারের সুখবর এসেছে চীন থেকে। চীনের সরকারি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি, দ্য চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কর্পোরেশন (সিএনওওসি), এই খনিটির সন্ধান পেয়েছে। চীনের সরকারি বার্তাসংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নতুন খনির নাম রাখা হয়েছে হুইঝৌ ১৯-৬। প্রাথমিক হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে ১০ কোটি টনেরও বেশি তেল মজুত রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই খনিতে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসও আছে, যদিও এখনও তার সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি।
দক্ষিণ চীন সাগর দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। চীনের সঙ্গে ফিলিপাইন, জাপান এবং সাগরের তীরবর্তী অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সমুদ্রসীমা নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করে আসছে, চীন তাদের জলসীমা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সুখবর হলো, হুইঝৌ ১৯-৬ কোনো বিতর্কিত এলাকায় নয়। এটি দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে অবস্থিত। এই জোন ২০০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত, যা প্রায় ৩৭০ কিলোমিটারের সমান।
হুইঝৌ ১৯-৬ খনিটি সাগরপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে অবস্থিত। এটির সবচেয়ে কাছের স্থলভাগ হচ্ছে চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ব্যস্ত বন্দর ও বাণিজ্যিক শহর শেনজেন। শেনজেনের উপকূল থেকে খনিটির দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। এই অবস্থানের কারণে খনিটি থেকে তেল ও গ্যাস পরিবহন বেশ সুবিধাজনক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতোমধ্যে এই খনি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে তেল ও গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়ে গেছে। সিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন ৪১৩ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হচ্ছে, যা প্রায় ৬৫ হাজার লিটারের সমান। এছাড়া প্রতিদিন ৬৮ হাজার ঘনফুট গ্যাসও পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিমাণ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের, এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে এ পর্যন্ত যত তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে হুইঝৌ ১৯-৬ সবচেয়ে বড়। এটি শুধু মজুতের দিক থেকে বড় নয়, অবস্থানের দিক থেকেও অনন্য। এর আগের খনিগুলোর তুলনায় এটি সাগরের অনেক গভীরে রয়েছে, যা চীনের গভীর সমুদ্রে তেল অনুসন্ধানের ক্ষমতার প্রমাণ দেয়।
চীনের জন্য এই আবিষ্কার বড় একটি সাফল্য। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল আমদানিকারক। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে বিদেশ থেকে তেল আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে চীন নিজস্ব সম্পদের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হুইঝৌ ১৯-৬ এই লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
এই আবিষ্কার শুধু চীনের অর্থনীতির জন্যই নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতেও সাহায্য করবে।