ঈদের আগে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
ঈদের আগে দেশের অর্থনীতিতে এলো সুখবর। মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের পর এবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানালো, দেশের মোট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। মাস শেষ হওয়ার আগেই এই মাইলফলক অর্জন করায় অর্থনীতিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ—সবার মুখে এখন আশার হাসি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২৭ মার্চ, দেশের গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমের সঙ্গে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং ব্যাংকের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এই সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।”
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি, যা বিপিএম-৬ নামে পরিচিত, সে অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ একটু ভিন্ন। এই পদ্ধতিতে গণনা করলে বর্তমানে দেশের নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রস আর নিট রিজার্ভের মধ্যে পার্থক্যটা কী? সহজ করে বললে, গ্রস রিজার্ভ হলো মোট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ। আর এই গ্রস থেকে স্বল্পমেয়াদি দায়বদ্ধতা বাদ দিলে যা পাওয়া যায়, সেটাই নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ। আইএমএফ এই নিট রিজার্ভকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।
মার্চ মাসের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। ৯ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এর ফলে গ্রস রিজার্ভ ২৫ বিলিয়নের নিচে নেমে যায়, আর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়নেরও কমে নেমে আসে—১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে। এই পরিস্থিতি অনেকের মনে শঙ্কা জাগিয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই রিজার্ভ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী এখন তা ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে এসেছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
এই পুনরুদ্ধারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের। মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো এক মাসে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী ভাই-বোনেরা যে কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। ঈদের আগে এই অর্থ প্রবাহ শুধু পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফোটায়নি, দেশের রিজার্ভকেও শক্তিশালী করেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভের এই ঊর্ধ্বগতি আমদানি ব্যয় মেটানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। তবে চ্যালেঞ্জ এখনো শেষ হয়নি। আকুর মতো নিয়মিত দায় পরিশোধের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে হবে। তবুও, ঈদের আগে এই সুখবর দেশবাসীর জন্য একটি আশার আলো।