ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ
সম্প্রতি শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটির মান্ডালে, সাগাইং, এবং নেপিডোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিয়ানমারের সামরিক সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১,৬৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর হাজার হাজার মানুষ আহত। এই দুর্দশার মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার দ্রুত সাড়া দিয়ে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে রোববার, ৩০ মার্চ সকালে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ বিমান মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই বিমানে করে পাঠানো হয়েছে ১৬.৫ টন ত্রাণ সামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি ওষুধ, খাদ্য, কম্বল, তাঁবু, পানির বোতল, এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল এবং চিকিৎসকদের একটি বিশেষ টিমও এই মিশনে যোগ দিয়েছে। এই দলটি মিয়ানমারের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে এবং আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা করবে।
আইএসপিআর-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সরকার এই ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়ানো।” ত্রাণবাহী এই বিমানটি রোববার সকালে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে এবং মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। সেখান থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে।
মিয়ানমারের এই ভূমিকম্প শুধু দেশটির ভেতরেই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। বাংলাদেশেও এর কম্পন অনুভূত হয়, যদিও এখানে তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ এই দুর্যোগে নীরব থাকেনি। ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান জানায়, যা তাদের পক্ষে একটি বিরল পদক্ষেপ। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীন, ভারত, রাশিয়া, এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোও ত্রাণ পাঠিয়েছে। বাংলাদেশও এই তালিকায় নাম লিখিয়ে প্রমাণ করেছে তার মানবিক দায়বদ্ধতা।
মিয়ানমার বর্তমানে একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। এর মধ্যে এই ভূমিকম্প যেন দুর্দশার ওপর আরেকটি আঘাত। জাতিসংঘের হিসেবে, দেশটির প্রায় ১৮.৬ মিলিয়ন মানুষ ইতোমধ্যেই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। এখন ভূমিকম্পের কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মান্ডালে শহরে ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং হাসপাতালগুলো আহতদের ভিড়ে পরিপূর্ণ।
বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রী এই কঠিন সময়ে মিয়ানমারের জনগণের জন্য একটি আশার আলো। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, খাবার নেই, ওষুধ নেই। বাংলাদেশের এই সাহায্য আমাদের বাঁচতে সাহস দেবে।” বাংলাদেশের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশংসার সুর শোনা যাচ্ছে। একজন ঢাকার বাসিন্দা বলেন, “আমরা গর্বিত যে আমাদের দেশ এই দুর্যোগে পড়শির পাশে দাঁড়িয়েছে।”
এই ত্রাণ সহায়তা শুধু জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের একটি সেতুবন্ধনও। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, এবং অতীতে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেলেও, এই মানবিক সহায়তা একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ আরও সহায়তা পাঠাতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
এই দুর্যোগের মধ্যেও আশার কথা হলো, বিশ্ব সম্প্রদায় একযোগে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের এই ত্রাণ প্রেরণ তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।